সহজ কুরআন (১ম খণ্ড) যে মানুষগুলো স্কুলে বইয়ের মাঝে লুকিয়ে চাচা চৌধুরি পড়তেন— একটু বড় হয়ে যাদের মাসুদ রানা না পড়ে পেটের ভাত হজম হতো না— পরিণত বয়সে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস যারা গোগ্রাসে গিলতেন—‘সহজ কুরআন’ পড়ে তাদেরও ভালো লাগবে।
বাংলাদেশের কর্মব্যস্ত যে শিক্ষিত মানুষটি বিভিন্ন কাজের চাপে মাঝে মাঝে শেলফে পড়ে থাকা কুরআনের কপিটির দিকে তাকিয়ে একটি ক্লান্তিকর কৌতূহল অনুভব করেন— যা খটোমটো অনুবাদ পড়ে কখনই মেটে না—সহজ কুরআন তার জন্য একটি বড় স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ সহজ কুরআন লেখার উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে কুরআনের কাছাকাছি নিয়ে আসা।
এ বইয়ে সেই ১৭টি সুরার সহজ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে যা বেশিরভাগ মানুষই ছোটবেলায় মুখস্থ করেছেন ও পড়েছেন। মাত্র ১৭টি সুরা জেনে পুরো কুরআন পড়া হয়ে যাবে না— কিন্তু পুরো কুরআনকে জানার একটি অমূল্য আগ্রহ আল্লাহ চানতো তৈরি হবে। কারণ এই ১৭টি সূরাতেই কুরআনের ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যের যে স্ন্যাপশট উঠে এসেছে সেটা দেখার পর পুরো কুরআন পড়ার ব্যাপারে আপনার একটি আগ্রহ তৈরি না হয়ে পারে না।
সহজ কুরআন (২য় খণ্ড) সহজ কুরআন লেখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে লেখক সহজ কুরআন প্রথম খণ্ডে বলে দিয়েছেন। দ্বিতীয় খণ্ডে মোট ২১টি সুরা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। প্রথম খণ্ডের ১৬টি সুরা বাদ দিয়ে ৩০তম পারার বাকি সব সুরা এই খণ্ডে নিয়ে আসা হয়েছে। সুতরাং কুরআনের শেষ পারার সব সুরা পাঠকগণ এ দুই খণ্ডে পেয়ে যাচ্ছেন (তা ছাড়া প্রথম খণ্ডে কুরআনের প্রথম সুরা ফাতিহার ব্যাখ্যা রয়েছে)। আমাদের লক্ষ্য থাকবে পরবর্তী খণ্ডগুলোতে আগে কুরআনের ২৭, ২৮ ও ২৯তম পারা নিয়ে কাজ শেষ করা ইনশা আল্লাহ। এরপর আমরা প্রথম পারা থেকে শুরু করে (সুরা ফাতিহা বাদ দিয়ে) ২৬তম পারা নিয়ে কাজ করব।
পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এভাবে পেছন থেকে শুরু করে তারপর কেন সামনে যাওয়া হচ্ছে। কারণ, কুরআনের বর্তমান ক্রমানুযায়ী যে সুরাগুলো আছে সেভাবে ব্যাখ্যা না করে যে সুরাগুলো প্রথম দিকে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে, লেখক সেগুলোর ব্যাখ্যা আগে আনতে চান। প্রথম দিকে অবতীর্ণ সুরাগুলো সাধারণত আকারে ছোট এবং কুরআনের কপিতে এদের অবস্থান শেষের দিকে। কিন্তু এ সুরাগুলোই আমাদের বেশি পরিচিত এবং এগুলোতে ইসলামের প্রাথমিক প্রস্তাবনাগুলো সবচেয়ে কাব্যিক ও সাহিত্যিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। এদের আগে বুঝে নিলে পরবর্তী সময়ে অবতীর্ণ (কিন্তু কুরআনে আগে স্থান পাওয়া) বড় বড় সুরা অনুধাবন করতে সুবিধা হবে।
এভাবে কুরআন শেখা কোনো আনকোরা পদ্ধতি নয়। সাহাবিগণ নিজেরাও এ পদ্ধতিতে কুরআন শিখেছেন এবং অন্যদেরও পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমে অবতীর্ণ এবং কুরআনে শেষে স্থান পাওয়া ছোট সুরাগুলো আগে ভালো করে অনুধাবন করে এরপর বড় বড় সুরায় হাত দেওয়াটা আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজেও শিখিয়েছেন সাহাবিদের এবং সাহাবিরা সেটাই অনুসরণ করেছেন।
সহজ কুরআন (৩য় খণ্ড) প্রথম দুই ভলিউমের তুলনায় তৃতীয় ভলিউমে সূরাগুলোয় ব্যাখ্যার পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে। শেষ পারার অধিক পঠিত ছোট সূরাগুলোয় যতটা ব্যাখ্যার অবকাশ ও প্রয়োজন ছিল ততটা পরবর্তী সময়ে আর নেই বলে মনে করছি। চেষ্টা করা হয়েছে অধিক ব্যাখ্যায় না গিয়ে অতটুকু কথা বলা যা পাঠককে চিন্তার ব্যাপারে সাহায্য করবে। কুরআন নিয়ে চিন্তা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতি ব্যাখ্যায় হারিয়ে গেলে সেটা সম্ভবপর নয়।
এই ভলিউম তৈরি করতে বেশ কিছু তাফসির গ্রন্থের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তার মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ড. সুলায়মান আল-আশকারের ‘যুবদাহ আত-তাফসীর’, ইমাম মুহাম্মদ মুতাওয়াল্লি আশ-শা’রাউইর ‘তাফসির আশ-শা’রাউই’, ইমাম তাহির বিন আশুরের ‘আত-তাহরির ওয়াত-তানউইর’, ইমাম ইবন আতিয়্যার ‘আল-মুহার্রির আল-ওয়াজিয’ ইত্যাদি। সহজ কুরআন (৪র্থ খণ্ড)
সহজ কুরআনের আগের বইগুলো যারা পড়েছেন তাদের মনে থাকার কথা যে প্রথম তিন খণ্ডে শেষ চারটি পারার সবগুলো সুরা ব্যাখ্যা করা হয়েছিল– সুরা ফাতিহাসহ। এর পেছনের কারণটি তৃতীয় খণ্ডের ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। শেষ চারটি পারার সুরাগুলো কুরআনের কপিতে শেষের দিকে রাখা হলেও সেগুলো অধিকাংশই অবতীর্ণ হয়েছিল প্রথম দিকে। তাই সেগুলো ভালো করে শেখার মাধ্যমে কুরআনের মূল শিক্ষার একটি ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। সেই প্রয়োজন শেষ হয়েছে। তাই চতুর্থ খণ্ড থেকে আমাদের লক্ষ্য থাকবে আবার শুরুতে ফিরে গিয়ে কুরআনের কপি অনুযায়ী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সুরাগুলো বাকি আছে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা। সেই লক্ষ্য মাথায় নিয়ে চতুর্থ খণ্ডে আমরা আলোচনা করছি কেবল সুরা বাকারা নিয়ে।