বইটি মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত। ভাল করে বললে সাড়ে-তিনটি (মানে চারটি) অংশে বিভক্ত। ১. আমাদের বিশ্বজগত, ২. পরমাণুবাদ, ৩. পরমাণুর জগতে, এবং ৪. এ. এম. হারুন অর রশিদ। বইটির সবচে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে তৃতীয় অংশটা। এবং লেখার মানে এই অংশটাই সবচে সেরা। কেও যদি বইটির প্রথম দিকের কয়েক পাতা পড়ে কিছুটা ক্লান্তিবোধ করে তাহলে বলব একছোটে তিন নম্বর অধ্যায়ে চলে যেতে। এখানে গেলে পড়তে কোনো সমস্যা হবে না। বইটি যে নামে প্রকাশিত হয়েছে সে হিসেবে এটিই আসল অংশ। আইনস্টাইন, রাদারফোর্ড, বোর, হাইজেনবার্গ সহ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অনেক রথী মহারথীর কাজের বিবরণ। বিজ্ঞানীর নাম নিচ্ছি বলে ব্যাপারটা এমন নয় যে লেখাগুলো বিজ্ঞানীর জীবনীকেন্দ্রিক, লেখাগুলো অনেক টেকনিক্যাল, তথ্যে পরিপূর্ণ ও সাবলীল। পরমাণুর আধুনিক ইতিহাস, পরমাণুর গভীরে ডুব দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন লেখক। তৃতীয় অধ্যায়ের চারটা স্বতন্ত্র লেখা। লেখাগুলোও অন্য লেখার তুলনায় সাম্প্রতিক। আর সাম্প্রতিক কালের লেখকের লেখার মান প্রশ্নাতীত। হাজার হোক দুটি পত্রিকার সম্পাদক। যত লেখাই আসুক, যে লেখকই লিখুক সবার আগে তাকেই পড়তে হয়। অল্পতেই বোঝা যায় কেমন হবে তার লেখা। তবে অবশ্য এটাই ঠিক যে সম্পাদনার মান ও পড়াশুনার পরিমাণের উপর লেখার মান ভাল বা খারাপ হওয়া নির্ভর করে না। অনেক ভাল সম্পাদক লেখক হিসেবে বাজে হতে পারে আবার হোমরা চোমরা সম্পাদক ভাল লিখতে পারেন। তৃতীয় অধ্যায়ের পরে দেখবো দ্বিতীয় অধ্যায়। এটার সবটাই মূলত প্রাচীন ইতিহাস। দুটি অধ্যায়। তৃতীয় অধ্যায়কে যদি মূল বই ধরে নেই তাহলে এটা হবে তৃতীয় অধ্যায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটা ছোট অধ্যায়। এই অধ্যায়ের লেখাগুলো মানের দিক থেকে একটু নীচের সারিতে পড়ে যায়। সাবলীলে পড়তে বেগ পেতে হয়। মূলত এগুলো আগের লেখা। অনেক আগে জিরো টু ইনফিনিটিতে প্রকাশিত হয়েছিল। জিরো টু ইনফিনিটির একদম শুরুর দিক থেকেই আমি এর পাঠক। একদম প্রথম দিকে ২০১২ সালের প্রথম সংখ্যা থেকে আমি এই ম্যাগাজিন পড়ছি। সেজন্য স্মৃতি থেকে এমন বিচার করতে পারছি এবং বলতে পারছি লেখক তখন নবীন ছিলেন তাই লেখার মানে সামান্য কমতি ছিল। এরপরে আসে প্রথম অধ্যায়টা, এই অধ্যায়ের ব্যাপারে আমি বেশিরভাগই নেতিবাচক। বইটি যে বিষয় ‘বস্তু’র উপর লেখা হয়েছে তার থেকে ভিন্ন টপিকের আলোচনা। বিশ্বজগত, মহাবিশ্বের মডেল, প্রাচীন বিজ্ঞানীর চিন্তা, সমস্যা, বিরোধ ইত্যাদি। এসব তো বস্তুর আলোচনা নয়। তবে হ্যাঁ এই বিশ্বজগৎ যেহেতু বস্তু দিয়ে গঠিত হয়েছে এবং প্রথম অধ্যায়ে বস্তুর কথাও এখানে ওখানে কয়েক বাক্য বলা হয়েছে তাই বলা যেতে পারে এই অধ্যায়ের লেখাগুলো অপ্রাসঙ্গিক নয়। তবে হয়তো যুক্তি দিয়ে প্রাসঙ্গিকতা ও অপ্রাসঙ্গিকতা আনা যাবে কিন্তু বইয়ের সৌন্দর্যে যে খুত দেখা দিয়েছে সেটা থেকেই যাবে। প্রথম অধ্যায়ের লেখাগুলো দার্শনিক চিন্তাভাবনায় ভরা। এবং অবশ্যই মৌলিক লেখা। দ্বিতীয় অধ্যায়ের মতো আগেকার লেখা। একেবারে শেষে বলতে গেলে- এমন বই কমই হয়। যারা জনপ্রিয় বিজ্ঞান লিখেন তাঁদের প্রায়ই গল্পের ছলে সাহিত্য মানের লেখা লিখে দায়িত্ব শেষ করে ফেলেন। আবদুল্লাহ আল মাহমুদের এই ধরণের প্রচেষ্টাই সিরিয়াস বিজ্ঞানের চর্চায় আমাদের এগিয়ে নিবে। জাওভাত খেয়ে খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেলে দাঁত ও জিহ্বার অবস্থা আজীবন শিশুই থেকে যাবে। বিজ্ঞানের মননে বাড়তে হলে শক্ত ও ঝাল কিছু দরকার। এই বইটি এই ক্যাটাগরির। শুভকামনা লেখককে, এরকম আরও বই উপহার যেন আমাদের দেয়। আর শুভকামনা এমন প্রকাশনীর। পেপারব্যাক, খুব ভাল কাগজ, ভাল ছাপা, স্বল্প দাম, সব জায়গায় সহজলভ্যতা সব সুবিধাই দিয়েছে এই প্রকাশনী। এই ধারা যেন চলতে থাকে আর অন্যান্য প্রকাশনীরাও যেন এটি দেখে উৎসাহিত হয়। #বইবাজার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মার্চ_২০১৯