আমাদের সমাজে যাকাতদাতার সংখ্যা বাস্তবে যেমন হওয়া দরকার, সেভাবে কিন্তু নেই। আবার যারা যাকাত দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই সঠিক নিয়ম মেনে তা আদায় করছেন না। আমার জানামতে—যদিও এর ওপর সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই; তবে এক যুগেরও অধিক সময় ধরে যেহেতু আমি ফাতোয়া বিভাগে কাজ করছি, সেই সুবাদে নানা মানুষের সাথে কথা বলার মাধ্যমে এ অভিজ্ঞতাটুকু অর্জিত হয়েছে।
যাকাত প্রসঙ্গে আমাদের সমাজে বিদ্যমান বেশ কিছু সমস্যা সামনে রেখে বইটি রচনা করা হয়েছে। বিশেষত আধুনিক যুগের নতুন ধরণের নানা রকম অর্থ ও সম্পদের ওপর যাকাতের প্রয়োগ ও হিসাব এই বইয়ের প্রধানতম আলোচ্য বিষয়।
প্রাচীন ফকিহগণের ভাষ্যের পাশাপাশি সমকালীন ফকিহগণের মত উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন শরিয়া বোর্ডের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও মতভেদ হলে, যে মতের মাধ্যমে দরিদ্রদের উপকার ও কল্যাণ অধিক নিশ্চিত হয়, যে মতের মাঝে অধিক সতর্কতা বিদ্যমান—সেই মত গ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে যাকাতদাতাদের স্বার্থও লক্ষ রাখা হয়েছে। প্রচলিত কোনো মাসআলার কারণে তাদের জন্য কঠিন অবস্থা সৃষ্টি হয়ে থাকলে, সেক্ষেত্রে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য মত প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, আধুনিক মাসআলায় সমকালীন ফকিহগণের নানা বৈচিত্র্যময় মত থাকবে, এটিই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে দলিল প্রমাণের আলোকে যে মত অগ্রগণ্য বলে মনে হয়, যে মতের অনুসরণে অধিক সতর্কতা বিদ্যমান, যে মতের মাধ্যমে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয় না, সে মত গ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে অন্য মতের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রাখা হয়েছে।
মোট ছয়টি অধ্যায় ও একটি পরিশিষ্টে গ্রন্থটি সাজানো। এতে যাকাত, উশর, সাদাকাতুল ফিতর—এ তিনটি বিষয় মৌলিকভাবে আলোচিত হয়েছে। আশা করছি করছি বইটির মাধ্যমে পাঠকগণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানতে পারবেন ইনশা আল্লাহ্।
মুফতী আব্দুল্লাহ মাসুম
আব্দুল্লাহ মাসুম। তিনি একাধারে হাফেজ, মাওলানা, মুফতি ও তরুণ ইসলামী অর্থনীতিবিদ। পাশাপাশি সুলেখক, উপস্থাপক ও আলোচক। পিতা : ডা. আব্দুল মান্নান। জন্ম : ১১/৮/১৯৮৫ ইং. তারিখে হবিগঞ্জ সদর।
শিক্ষা-দীক্ষা
১৯৯৯ সালে জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া নগর, হবিগঞ্জ থেকে হিফযুল কুরআন সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স সমমান) সমাপ্ত করেন। ২০০৭-২০১২ দীর্ঘ পাঁচ বছর মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়া ঢাকায় ফিকহ ও ফতোয়া (ইসলামী আইন শাস্ত্র), বিশেষত ফিকহুল মু‘আমালায় (ওংষধসরপ ঈড়সসবৎপরধষ ঔঁৎরংঢ়ৎঁফবহপব) উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণা করেন।
মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়ার পক্ষ থেকে তাঁর ‘প্রত্যয়ণপত্রে’ তাঁর প্রিয় উস্তায ও রাহবার, মারকাযুদ্দাওয়ার সম্মানিত মুদীর (পরিচালক) ও প্রধান মুফতি, মুফতি আবুল হাসান মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ লিখেছেন:
‘তিনি এ সময়ে উস্তাযদের তত্ত্বাবধানে ফিকহুল মু‘আমালাতসহ ফিকহে ইসলামীর বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণামূলক পড়াশোনা করেছেন।’
মারকাযুদ্দাওয়াহ আল ইসলামিয়া, ঢাকায় অধ্যয়নকালে প্রস্তুতকৃত তার কয়েকটি গবেষণাপত্র
أحكام الأضحية في ضوء القرآن والسنة (কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কুরবানীর বিধি-বিধান)
শেয়ার বাজার : পরিচিতি ও শরঈ বিধান।
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি : পরিচিতি ও শরঈ বিধান।
ফিকহুল মুআমালাত বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ থাকায় এক সময় তিনি এ্যাওফি (অপপড়ঁহঃরহম ধহফ অঁফরঃরহম ঙৎমধহরুধঃরড়হ ভড়ৎ ওংষধসরপ ঋরহধহপরধষ ওহংঃরঃঁঃরড়হং-অঅঙওঋও) কর্তৃক পারিচালিত ফিকহুল মুআমালাত বিষয়ে উচ্চতর এক আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হন। এর মধ্য দিয়ে তিনি অর্জন করেন ইসলামিক ফিন্যান্সে ‘সার্টিফাইড শরীয়াহ্ এ্যাডভাইজর ও অডিটর’ (ঈঝঅঅ) সার্টিফিকেট।
কর্ম জীবন
২০১২ এর শেষে তিনি সহকারী মুফতি হিসেবে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ মাদ্রাসার ফতোয়া বিভাগে সহকারী মুফতি পদে যোগদান করে অদ্যাবধি তিনি সেখানে কর্মরত আছেন।