জাদিগ মূলত প্রথমে প্রাচীন ক্যান্ডীয় ভাষায় রচিত হয়েছিল, সে ভাষা যা আপনার বা আমার অবােধ্য। বিখ্যাত সুলতান উলুগ বেগ-এর মনােরঞ্জনের জন্য গ্রন্থটি আরবি ভাষায় অনূদিত হয়। সে সময়ে আরব ও পারসিকরা সহস্র এক রজনী’, ‘সহস্র এক দিবস ইত্যাদি লিখতে শুরু করে। উলুগের অধিক পছন্দ ছিল জাদিগ পড়া; কিন্তু সুলতানরা বেশি পছন্দ করতেন ঐসব ‘সহস্র এক'। তার জীবনের দর্পণে অষ্টাদশ শতাব্দী তার মুখ দেখেছে। ভলত্যারের ব্যক্তিগত ঘাতপ্রতিঘাত, সংগ্রাম, মনন, আবেগ, লক্ষ্য যেন ঐ যুগেরই ইতিবৃত্ত, যার পরিণতি ফরাসি বিপ্লব। সংযােগটা অসাধারণভাবে পারস্পরিক ছিল : তিনি যতখানি দেশ ও কালের ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, তার ভাবনাও ততখানি তার যুগ ও জনমানসকে প্রভাবিত করছে। ফরাসি বিপ্লব তিনি দেখে যেতে পারেননি, কিন্তু তার বুঝতে ভুল হয়নি সে বিস্ফোরণের আর খুব বেশি দেরি নেই। ১৭৬৪ সালে এক চিঠিতে ভবিষ্যদ্বাণীর মতাে তিনি লেখেন, “আমি যা কিছু দেখছি সে-সবই এক বিপ্লবের বীজবপন। এ বিপ্লব অনিবার্যভাবে আসবে, কিন্তু তা প্রত্যক্ষ করার আনন্দ আমার জীবনে ঘটবে না।... তরুণ বয়সীরা ভাগ্যবান, তারা চমত্তার সব জিনিস দেখবে।
ভোলটেয়্যার
ভলত্যার জন্মেছিলেন ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে এক স্বচ্ছল পরিবারে। আসল নাম ছিল জ-মরি আরুয়ে। সে-নামের অক্ষরগুলাে কেটে হেঁটে উলটে পালটে নিজে করে দেন ভলতেয়ার। মারা যান ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে। প্যারিসে এক স্বচ্ছল পরিবারে খ্রিস্টিয় জেসুইট সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রথম বিদ্যাশিক্ষা, যে-সম্প্রদায় পরে তাঁর আক্রমণের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হয়। পাদ্রি-শিক্ষকরা বালকের তীক্ষ্ণ মেধার যেমন প্রশংসা করতেন, তেমনই তার দুঃসাহসী চিন্তায় উদ্বিগ্ন হতেন। পিতা চেয়েছিলেন পুত্র আইনজীবি হােক। কিন্তু তার আশা পূর্ণ হলাে না। আইন ছেড়ে ভলত্যার ভিড়ে গেলেন সাহিত্যে। অল্প বয়সেই কবিতা লেখার অভ্যাস হয়েছিল, উপরন্তু ছিল বাকপটুতা। ফলে অভিজাত সাহিত্যানুরাগী মহলে প্রবেশ করতে অসুবিধা হলাে না। প্রশংসাও পেলেন সঙ্গে সঙ্গে।