কেনো বলা হলো—أَحْسَنَ الْقَصَصِ ?
কারণ কী?
রহস্য কী?
এ-কারণে কি—তা বর্ণিত হয়েছে গল্পের ঝরা-ঝরা বর্ণনায়? ভাব-প্রকাশের সূক্ষ্ম-সূক্ষ্ম সুতোয় টান দিয়ে-দিয়ে?
নাহ্! এটা মূল কারণ না!
আসল কারণ হলো—এই এর কাহিনিতে জড়ো হয়েছে মানব-কোমলতা ও সূক্ষ্মতার এক চিরন্তন রূপ। শুধু জড়োই হয় নি, ‘ঠাসাঠাসি’ ভিড় করে জড়ো হয়েছে। ইউসুফ এর কাহিনিতে মানব-আবেগ অনুভূতির সহজাত যে-প্রস্রবণ পরিলক্ষিত হয়েছে, তা ততোটাই চিরন্তন ও কালজয়ী, যতোটা চিরন্তন ও কালজয়ী এই জীবন। ইউসুফ-কাহিনির এই আবেগ স্পর্শ করেছে বারবার হৃদয়-তন্ত্রীর সূক্ষ্ম-সূক্ষ্ম তার। বিপুল বিস্ময় ও মুগ্ধতায় কাছে টেনেছে পাঠককুলকেও, গভীরভাবে। আলোড়িত হয় সবাই—চিন্তা-চেতনার এবং আকিদা-বিশ্বাসের ভিন্নতাকে ছাপিয়ে।
এই কাহিনিতে আছে পিতৃত্বের ডাক, পুত্রত্বের হাতছানি! আবার উভয় সম্পর্কের টানাপোড়েন।
এই কাহিনিতে আছে পিতার ভালোবাসা কোনো কোনো পুত্রের প্রতি চোখে পড়ার মতো বেশিমাত্রায়। যা হয়ে ওঠে চক্ষুশুল অন্যদের তরে।
এই কাহিনিতে আরও আছে ঘর—কন্যার ‘সতীন-যন্ত্রণা’। তাদের সংকট-সমস্যা। তাদের অন্তর্জালালর লাল-নীল বেদনা।
এই কাহিনিতে আরও আছে ভ্রাতৃ-বিদ্বেষের কালো-কালো ছবি। নীল-নীল চিত্র। দুঃখ-দুঃখ প্রতিক্রিয়া।
এই কাহিনিতে আছে প্রিয়হারা বাবার বিরহ-ছাওয়া দিন রাত্রির ধৈর্যময় দীর্ঘ-দীর্ঘ রাত। বিরহ-ঝরা উদাস-উদাস নীরব দিন।
এই কাহিনিতে আরও চোখে পড়বে হৃদয়ে হৃদয়ে বয়ে যাওয়া দুঃখ-নদীর সুনসান প্রবাহধারা। তার রেখে-যাওয়া দুঃসহ দৃশ্যমান ছাপ।
এই কাহিনিতে আছে প্রেম-পীড়ার আবেগঘন উদয়-অস্ত। বিধ্বংসী আনাগোনা। তার বিবেক-তাড়ানিয়া উৎপাত। তার ঝলসে-দেওয়া ঝলক।
এই কাহিনিতে আছে কোত্থেকে কোথায় উঠে যাওয়ার ধাপ-ধাপ সিঁড়ির গল্প। ‘কূপ-সন্তান’-এর সিংহাসন জয়ের হৃদয়-মাতানো উপখ্যান। আল্লাহর নেয়ামতের বৃষ্টিতে সুস্নাত হওয়ার কোমল মসৃণ গল্প।
এই কাহিনিতে আর কী কী আছে?
আরও আছে তাকওয়া ও সবরের মহা বিজয়ের জ্যোতির্ময় পরিণতির সবুজ ছায়া।
আছে আরও অনেক গল্প, অনেক কথা। যা ধীরে-ধীরে সবিস্তারে আমরা আপনাকে বলবো, ইনশা আল্লাহ । আশা করি—আপনাকে আপনার জাগ্রত হৃদয়কে আমাদের সাথেই পাবো!