বুক সামারি মুক্তিযুদ্ধের আগে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাবলীর পটভূমিতে লেখা হয়েছে এই উপন্যাসটি। একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্ররা, বিশেষ করে প্রধান চরিত্র মুঈন। মুঈন সমর্থন পেয়েছে তার বিদেশি স্ত্রীর মিতার কাছ থেকে এই প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের উত্থানের আগেই জীবনযাপনের জন মুঈন গড়ে তুলেছে কম্যুন ব্যবস্থা। সদস্য হিসেবে পেয়েছে সমমনা কিছু মানুষকে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ইউটিপিয়ার আদর্শ ক্রমাগত মার খেয়েছে, কিন্তু মুঈনের আশাবাদ তার জন্য তিরোহিত হয়নি। সমাজের বৃহত্তর পরিবেশে মূল্যবোধের অবক্ষয় তাকে নিরুৎসাহিত করেনি ইউটোপিয়া প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা থেকে। তবে তার মনে এক সময় প্রশ্ন জাগে তার মৃত্যুর পরে কী টিকে থাকবে? এমন সময় এক যুদ্ধশিশুকে নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে আসে সুমন ও সুমী। এরপরে সেই যুদ্ধশিশু যে কিনা এখন যুবক, তার হাতে কম্যুন ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে ইউটোপিয়ার সীমিত দৃষ্টান্ত হয়ে, এই নিশ্চিতি পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুঈন। তাকে আরো আশ্বস্ত করে জীবনসঙ্গী মিতা যে প্রবাস থেকে চলে আসবে বলে জানায়। এরপরের বাস্তবতাও উঠে এসেছে এই আখ্যানে।
হাসনাত আবদুল হাই
হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায়। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশাের, ফরিদপুর শহরে । কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনােমিকস্ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যােগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে ছােটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছােটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালােচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল। বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্রবাস জীবনে। প্রকাশিত ছােটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্রমণ-কাহিনী ছয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মােহাম্মদ আকরম খাঁ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক।