ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ কবি আবদুল হাই শিকদারের ভ্রমণ বিষয়ক বইগুলো বাংলা সাহিত্যের এক প্রাণবস্ত সম্পদ। অদ্ভুত এক অনুসন্ধ্যৎসা এই গ্রন্থগুলোর পাতায় পাতায়। ফলে এ শুধু দু’চোখ মেলে দেখার বিষয়ে থেমে নেই, একই সঙ্গে অনুভবের, অনুধাবনের। বিশ্বজুড়ে যখন ‘ইকো-টুরিজমের’ কথা, সেই সময় এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক। ক্যামেরার চোখ দিয়ে কাজ করে আবদুল হাই শিকদারের কলম।আবার অন্তরের অন্তস্থলকেও করে অনায়াসে উন্মোচন। অতীতের সঙ্গে বর্তমান, ইতিহাসের সঙ্গে ভূগোল, যাপিত জীবন ও সংস্কৃতির অন্ধিসন্ধি তিনি অতি অনায়াসে একটি মামার মতো গ্রথিত করেন একসাথে। মানচিত্রের পাশাপাশি মানুষকে জানবার, বুঝবার আকুতি তাঁর শব্দে শব্দে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় তাঁর সাবলিল বলবার ভঙ্গিটি-যার মধ্যে থাকে কাব্যিক দ্যোতনা। ফলে মনোরম কিন্তু দায়িত্বশীল এক অভিজ্ঞতা পাঠক লাভ করেন। কবি আবদুল হাই শিকদারের ভ্রমণ বিষয়ক বইগুলোর পাঠকপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই সেগুলো দু’ মলাটের মধ্যে নিয়ে হলো ভ্রমণ সমগ্র’। ভূমিকা ভ্রমণ আসলেই এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা আসে দেশ, নিগর্স থেকে, আসে সংশ্লিষ্ট মানুষজন, তাদের জীবন যাপন, ইতিহাস, ভূগোল, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে।ফলে আমার কাছে ভ্রমণ কেবলমাত্র ভ্রমণ নয় আরো বেশি কিছু, অতীতের সঙ্গে বর্তমান, ইতিহাসের সঙ্গে যাপিত জীবনের উচ্চারণ ও অর্জনকে মিলিয়ে মিলিয়ে একটি জাতির অন্তর্লোকের অনুসন্ধান; মহত্ব ও কল্যাণবোধ থেকে সুষমা প্রাপ্ত হওয়া। তা যদি নাও হয় তবুও দেখাটা তো মিথ্যে হয়ে যায় না।এজন্যই আমার অন্তরের আকুতিগুলি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একসময় শুরু করি ভ্রমণ কাহিনী লেখা। এ ক্ষেত্রে শুধু বাইরের আকাশে বিবরণ নয়, বাড়ির পাশে আরশি নগরকেও আমি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছি।যে নিজেকে, নিজের দেশকে ভালোবাসে, গভীরভাবে জেনেছে, সেই তো যথার্থ অর্থে হতে পারে বৈশ্বিক। পাঁচটি বই। তাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বহুদিন।তরুণ বন্ধু আমলগীর হোসেন খানের তাগাদা আসে বার বার। শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয়জন প্রকাশক মনিরুল হকের হৃদয়বান হাত ‘ভ্রমণসমগ্র’ কে সকলের চোখের সামনে নিয়ে এল। আবদুল হাই শিকদার অক্টোবর ২০০৫
ভূমিকা *সিরাজদৌলা মুর্শিদাবাদ *কবিতীর্থ চুরুলিয়া *নিপ্পন নি সাসাগু *ফিরে ফিরে আসি *অন্তরে বাহিরে তুমি রূপকথা : সোনারগাঁও
আবদুল হাই শিকদার
আবদুল হাই শিকদার। জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৫৭। দুধকুমার নদীতীরে, কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারীর দক্ষিণ ছাট গোপালপুর গ্রামে। পিতা কৃষিবিদ ওয়াজেদ আলী শিকদার। জননী হালিমা খাতুন। মওলানা ভাসানীর দীর্ঘ ছায়ায় আশৈশব বেড়ে ওঠা। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার বেশির ভাগ কেটেছে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন স্নাতক সম্মান, ঢাকা থেকে স্নাতকোত্তর। তার পুরো পরিবার অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। প্রিয় কবি মনসুর বয়াতী, লালন ফকির, চণ্ডীদাস, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, ফররুখ আহমদ। স্বপ্ন ছিল চে গুয়েভারা হওয়ার। লেখালেখির শুরু স্কুল জীবনে। বিকাশ আশির দশকে। পেশা সাংবাদিকতা। বর্তমানে তিনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে’র নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সরকারি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নিয়মিত সাহিত্য মাসিক এখন-এর মূল স্থপতি তিনি। কবিতা, ছড়া, জীবনী, গল্প, গবেষণা, ভ্রমণ, চলচ্চিত্র সব মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। জননেতা অলি আহাদের স্নেহধন্য তিনি। অলি আহাদের জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারও তাঁরই নেয়া।