ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ভাষাবজ্ঞিান একটি তাত্ত্বিক বিষয়।এই বিষয়টিকে হুমায়ুন আজাদ- তাঁর অন্যান্য লেখার ও চিন্তার ক্ষেত্রে যেমনটি করেন-সহজ ও সুখপাঠ্য রুপে এ গন্থে উপস্থাপন করেন।এটি মূলত ভাষাবিজ্ঞান আগহী ছাত্রদের জন্য একটি পরিচিতি মূলক বই। বইটি পাঁচটি ইউনিটে ভাগ করে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপস্থাপন করা হয়েছে বাঙলা ভাষার ভাষাবিজ্ঞানীদের ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা । ভাষা বিজ্ঞানের বিশার অবয়বের মধ্যে হুমায়ুন আজাদ খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে প্রাচ্য, বিশেষত বাংলা ভাষার ও ইউরোপীয় ভাষার ভাষাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ন প্রসঙ্গগুলো তুলে ধরেছেন। সূচিপত্র *ভূমিকা *ইউনিট ১ ভাষা:প্রকৃতি ও কাঠামো *ইউনিট ২ ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান *ইউনিট ৩ ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাস *ইউনিট ৪ প্রথাগত ব্যাকরণ *ইউনিট ৫ রুপান্তর মূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ ভূমিকা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অগ্রপথিকদের চিরশত্রু এদেশের মৌলবাদী চক্রের নিষ্ঠুর অস্ত্রের আঘাতের ফলে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত হতে শেষ পর্যন্ত ফিরে আসতে পারেনি পন্ডিত -অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। ধর্মাদ্ধদের হিংস্র থাবার আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় আজ হতে চার বছর আগে তাঁর প্রয়াণ ঘটে স্বজনহীন চিকিৎসা-বঞ্চিত পরিবেশে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার তীর্থ ভূমি জার্মানিতে। গতানুগতিক প্রথায় আবদ্ধ আমাদের সমাজ পরিবেশের নিয়ামকদের অসামান্য মূর্খতার সমান্তরালে গ্রাম্যে কুচক্রের মুখোশ উন্মোচনের জন্যপ্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। নির্দ্বিধায় উচ্চকন্ঠে সত্য বলার সাহসের জন্য পেয়েছেন মুক্তমনা তরুন সমাজের ভালোবাসা। তাঁর প্রয়াণ এই বাংলাদেশের সমা্জ -রাষ্ট্রের ক্ষতি , মানবেতার ক্ষতি সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে আমাদের বিদ্যালয় অঙ্গনে , শিক্ষার ক্ষেত্রে । এই প্রসঙ্গে বলতে হয় আমাদের গ্রন্থভবন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় অত্যন্ত দীন। এই দীনতার রাজ্যে ভাষা বিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ করে চোমস্কি উত্তর বস্তু নিষ্ঠ তাত্ত্বিক শাস্ত্রাটির ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনা শুরু করেছিলেন ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ। বিগত শতকে তাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় ব্যাপৃত থাকলেও বর্তমান শতকের শুরুতে তিনি ভাষাবিজ্ঞানের ফলিত শাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন।বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জ্ঞান পিপাসুদের আকাঙ্খা পূরনের জন্য ভাষার ব্যাকরণ রচনার তাগিদে ড. হুমায়ূন আজাদ লিখতে শুরু করেছিলেন ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান শিক্ষার প্রণালীর পদ্ধতির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। কিন্তু প্রকৃতির নিষ্ঠুর পরিহাসে ভাষাবিজ্ঞানের প্রায়োগিক শাখায় পদচারণা তার অকস্মাৎই থেমে গেল। পড়ে রইল তাঁর পাঠ কক্ষের বহুবিধ কাগজ পত্র, পাণ্ডলিপির ভিড়ে যৎসামান্য রচনা। সেখান হতে উদ্ধারকৃত ভাষাশিক্ষা ও ভাষাবিজ্ঞান পরিচিতি নামক পাণ্ডলিপিটি গ্রন্থাকারে লেখা হলো।এটি শিক্ষাদনের প্রায়োগিক সুত্রাবলির আলোকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি অনুযায়ী পরিকল্পিত ও লিখিত। ভাষা শিক্ষা ও ভাষাবিজ্ঞান পরিচিতি শিক্ষার্থীদের উপকৃত করবে বলে আশা ও বিশ্বাস করি। গ্রন্থটিতে যে কোন অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা পাঠকদের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। আগামী প্রকাশনী আগ্রহী হয়ে গ্রন্থটি প্রকাশ করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। শামসুর নাহার গফুর প্রাক্তন অধ্যাপক ,বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক ভাষাশিক্ষা কেন্দ্র জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।