‘উত্তরফাল্গুনী’ বইয়ের কিছু কথাঃ এক কার কথা আগে লিখি। কার কথাই বা আগে বলি। সেই কালো পাতলা রেশমী বোরখায় আপাদমস্তক আবৃত নিঃশব্দচারিণীর কথা, বোরখার চোখের ছিদ্রপথ দিয়ে যার দুটি কালো অশ্রু ছিলো ছলো চোখ নির্নিমেষে চেয়ে থাকত, না মিশনারি বোর্ডিংয়ের সেই চাঁপার কলি গায়ের রং রোগা মুখচোরা মেয়েটির কথা| না সেই ব্যারিস্টার মণীশ রায়ের কথা। না সেই ইন্দ্ৰনীলের কথা। সাদা কাগজের বুকে সাজানো হরফের পর হরফ। সারি সারি হরফগুলি। এক হিমবাহী শীতের সকাল। শৈলশিখরে জমাট-বাঁধা বরফের স্তুপ। গলিত সূর্যের রুপালী স্রোতে ঝিলমিল-ঝিলমিল করছে। আরও অনেক নীচে শৈলসানুদেশের পাইনের অরণ্যে থেকে থেকে হিমকণাবাহী উত্তুরে বায়ুর শনশনানি চলছে। সোঁ-সোঁ। সেতারের তারে তারে একটা সুব্রতরঙ্গ। সুপর্ণ! পাইনের স্বপ্ন যেন সহসা ভেঙে গেল। বই থেকে মুখ তুলে চমকে ফিরে তাকাল সুপর্ণ। পাশেই দাঁড়িয়ে…
নীহাররঞ্জন গুপ্ত
নীহাররঞ্জন গুপ্তের জন্ম অখণ্ড বাংলার যশাের জেলায় ১৯১২ সালের ৬ই জুন। কলকাতায় বড় হয়েছেন। পড়াশুনাের জন্য বাল্যবয়সেই কলকাতায় চলে আসেন। এখানেই কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ (বর্তমান আর, জি. কর কলেজ) থেকে ডাক্তারি পাস করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যােগ দিয়ে মেজর পর্যন্ত হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে মিশর পর্যন্ত বিভিন্ন রণাঙ্গনে থেকেছেন। ব্রহ্মদেশেও অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। যুদ্ধশেষে লন্ডনে গিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন চর্মরােগবিশেষজ্ঞ ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। জনপ্রিয় রহস্য-কাহিনীকার, বাংলা সাহিত্যে গােয়েন্দা-চরিত্র ‘কিরীটী রায়’-এর স্রষ্টা নীহাররঞ্জন বড়দের ও ছােটদের জন্য সব মিলিয়ে দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। কলেজের ছাত্রাবস্থায় তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রাজকুমার। সবুজ সাহিত্য’ নামে একটি ছােটদের পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ‘কালােমর’ ছাড়াও তার অন্যান্য উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে ‘অস্তি ভাগীরথী তীরে, ‘তালপাতার পুঁথি’, ইতিহাস কথা বলে, ‘উল্কা’, ‘উত্তরফাল্গুনী’, ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’, ‘লালুভুলু’, ‘বাদশা’, রাতের রজনীগন্ধা’ প্রভৃতি।