কাজী নজরুল ইসলামকে কবি হিসেবেই সবাই চেনে। কিন্তু কবি নজরুলের বিকাশ ঘটেছে কথাসাহিত্য দিয়েই। প্রথম জীবনে তিনি গল্প-উপন্যাস লেখেন। ‘মৃত্যুক্ষুধা’ বাদ দিলে তাঁর বাকি ৩টি গল্পগ্রন্থ ও ২টি উপন্যাস কবি হয়ে ওঠার আগের লেখা। তাই তাঁর সমগ্র সাহিত্য-জীবনের সূচনা-পূর্বের ইতিহাস সামনে রেখে বলা যায় গল্প-উপন্যাস লেখক নজরুল কবি নজরুলের অগ্রজ।
নজরুলের সাম্যবাদ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার যে প্রকাশ পরবর্তী জীবনে তাঁর লেখায় ফুটে ওঠে, সেসব উপন্যাসগুলোর বিভিন্ন চরিত্রের মাঝেও লক্ষণীয়। নজরুলের চিন্তাধারার রিয়ার্সেল-গ্রাউন্ড তাঁর কথাসাহিত্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কথাসাহিত্য সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ভাবের সংস্কৃতি সমন্বয়ের সাধনায় এই এক নতুন অবদান আনছ তুমি।
কথাসাহিত্য নজরুল প্রতিভার বিশিষ্ট অবদান বিভিন্ন সংস্কৃতি-সমন্বয়ের সাধনা। উপন্যাস গুলোর কাহিনি ও চরিত্র নির্মাণে তিনি যে দার্শনিক প্রজ্ঞার প্রতিফলন করেছেন তা বৃহত্তর মানবজীবনকে উন্মুক্ত আকাশ পানে টেনে নিয়ে যায়।
কাজী নজরুল ইসলাম
বাংলাদেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে (২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসােল মহকুমার। চুরুলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী ফকির আহমদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন। এ সময় তিনি জীবিকার প্রয়ােজনে লেটো’র দলে যােগ দেন কিন্তু বেশিদিন তিনি এ দলে থাকেননি। দশ বছর বয়সে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করার পর তিনি গ্রামের মক্তবে কিছুদিন শিক্ষকতার চাকরি করেন। তারপর তিনি চলে আসেন নতুন কর্মস্থল আসানসােল। সেখানে থানার দারােগা জনাব রফিজউদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তার সঙ্গে চলে আসেন দারােগার। নিজগ্রাম ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুরে দারােগা সাহেব তাঁকে ভর্তি করে দেন ত্রিশালের দরিরামপুর হাই স্কুলে। এখানে প্রায় এক বছর। পড়ালেখার পর নজরুল পুনরায় চলে যান চুরুলিয়ায় ।। ভর্তি হন রানীগঞ্জের শিয়ারসােল রাজ স্কুলে। এখানে। তিনি পড়াশােনা করেন তিন বছর। এ সময় প্রথম মহাযুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। নজরুল তখন প্রবেশিকা। পরীক্ষা দেবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হতেই তিনি যুদ্ধে যােগ দিলেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে যােগ দেন ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে। তিন বছর তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকেন। তার চাকরিজীবন ছিল মূলত করাচিতে এ সময় তাকে পেশােয়ার, নওশেরা, বেলুচিস্তান পর্যন্ত যেতে হয়েছে। সৈনিকজীবনে অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি প্রথমে হাবিলদার ও পরে ব্যাটেলিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পদে উন্নীত হন। করাচির সৈনিক জীবনকে বলা হয় তার প্রতিভার সাজঘর।