ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ জহির রায়হানের পরিচয় শুধু এদেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই নয়, আমাদের কথাসাহিত্যেরও তিনি একজন অগ্রগণ্য ব্যাক্তিত্ব। আপাদমস্তক শিল্পী বলতে যা বোঝায় তিনি ছিলেন তাই। সর্বক্ষণ সৃষ্টির প্রেরণায় অস্থির এই মানুষটি চলচ্চিত্র ও সাহিত্য এই দুই অঙ্গনেই ছিলেন সমানভাবে সক্রিয়। আর দুই ক্ষেত্রেই তিনি তাঁর প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। ছিলেন প্রবলভাবে দায়বদ্ধ একজন মানুষও। আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সংগ্রামী অভিযাত্রার প্রতিটি পর্যায়ে তিনি কেবল আলো হাতে জাতিকে পথই দেখাননি, ইতিহাসের বাঁকগুলো বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে তাঁর রচনায়। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের অব্যবহিত পর তাঁর বিয়োগান্ত অন্তর্ধানের ঘটনাটি জাতিকে কেবল হতবাক ও বেদনায় মোহ্যমনই করেনি, যেমন আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প তেমনি কথাসাহিত্যকেও অনেকখানি রিক্ত করে দিয়ে গেছেন। তারপরও মাত্র ৩৬ বছরের পরমায়ু নিয়ে চলচ্চিত্র ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে তিনি তাঁর প্রতিভার যে স্বাক্ষর, সৃষ্টিশীলতায় যে ফসল রেখে গেছেন, নিঃসন্দেহে তাই তাঁকে অমর করে রাখেবে। যদিও বাস্তব কারণেই চলচ্চিত্রকার পরিচয়ের আড়ালে কথাসাহিত্যিক হিসেবে তাঁর অবদান হয়তো বা কিছুটা ঢাকাই পড়ে গেছে। আমাদের বর্তমান প্রয়াসের লক্ষ হল দেশের বিশেষ করে নবীন প্রজন্মের পাঠকদের কাছে জহির রায়হানের সাহিত্যিক অবদানের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় তুলে ধরা। আর সেই লক্ষ্য থেকেই আমরা তাঁর উপন্যাসগুলো একত্রে ও আলাদা আলাদাভাবে এবং গল্পসমগ্র প্রকাশের পরিকল্পনা করেছি। আশা করি এর ফলে আজ ও আগামী দিনের পাঠক আমাদের মহান এক কথাশিল্পীর প্রতিভার সঙ্গে সম্যক পরিচিতি হবার সুযোগ পাবেন।
সূচিপত্র * শেষ বিকেলের মেয়ে - ১৭ * তৃষ্ণা - ৯১ * হাজার বছর ধরে - ১৩৫ * আরেক ফাল্গুন - ১৯৭ * বরফ গলা নদী - ২৬৩ * আর কত দিন - ৩৫৩ * কয়েকটি মৃত্যু - ৩৭৫ * একুশে ফেব্রুয়ারী- ৩৯৯
জহির রায়হান
জহির রায়হান : জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষা কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউট ও আলিয়া মাদ্রাসায়। ফেনীর আমিরাবাদ হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। তার আগেই কলকাতার বিখ্যাত নতুন সাহিত্য পত্রিকায় ‘ওদের জানিয়ে দাও শিরােনামে তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যােগ দিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক জে এ কারদারের সহকারী হিসেবে। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনাে আসেনি' মুক্তিলাভ করে ১৯৬১ সালে।
ছাত্রজীবনেই তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। ১৯৬৪ সালে তার হাজার বছর ধরে উপন্যাসটির জন্য তিনি আদমজি পুরস্কার লাভ করেন। পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম' তাঁর হাত দিয়েই তৈরি হয়। ১৯৭০ সালে মুক্তিলাভ করে তাঁর পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া ছবিটি। এটি ছিল এদেশের প্রথম যথার্থ রাজনৈতিক চেতনাসমৃদ্ধ ছবি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তৈরি করেন ‘স্টপ জেনােসাইড' ও ‘এ স্টেট ইজ বর্ন ছবি দুটো। এ সময় গঠিত বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী মুক্তি পরিষদ’ এর তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বড় ভাই শহীদ সাংবাদিকঔপন্যাসিক শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। সাহিত্যকর্মের জন্য জহির রায়হান বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭২) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯২) এবং চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় একুশে পদক লাভ করেন (১৯৭৭)।