বাংলা প্রতিবাদী কাব্যধারায় রুদ্র মুহম্মদ। শহিদুল্লাহ এক অনিবার্য নাম। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের উত্তাল কালপর্বে আবির্ভূত এই কবি একাধারে দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের নিবিষ্ট সাধক। মাটি, মানুষ ও ঐতিহ্যের প্রতি আমৃত্যু দায়বােধ তার কাব্যের মৌল শক্তি। সকল অসাম্য, শােষণ, স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ উচ্চারণ তাকে পরিচিতি দিয়েছে তারুণ্যের দীপ্র প্রতীক'-এ। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম ১৬ অক্টোবর।
১৯৫৬ (২৯ আশ্বিন ১৩৬৩)। পিতা ডা. শেখ ওয়ালীউল্লাহ ও মাতা শিরিয়া বেগম। পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার মােংলা থানার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে। শৈশব কেটেছে নানাবাড়ি মিঠেখালি গ্রামে ও মােংলায়। ১৯৭৩ সালে ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে বাংলায় স্নাতক-সম্মান ডিগ্রি ও ১৯৮৪ সালে স্নাতকোত্তর (বাংলা) ডিগ্রি লাভ। । স্কুল-জীবন থেকেই লেখালেখির শুরু সম্পাদনা করেছেন বেশ কয়েকটি সাহিত্যপত্র। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট’ ও ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদ’-এর প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। গীতিকার হিসেবেও জনপ্রিয়তা অর্জন ১৯৮৯ সালে গড়ে তােলেন ‘অন্তর বাজাও' নামে সংগীত দল। কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ৭টি উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে চাই স্বনগ্রাম (১৯৮১), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪), ছােবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), মৌলিক মুখােশ (১৯৯০)। মৃত্যুর পর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ এক গ্লাস অন্ধকার (১৯৯২), কাব্যনাট্য বিষ বিরিক্ষের বীজ (১৯৯২) ও গল্পগ্রন্থ সােনালি শিশির (২০০৫)। এছাড়া তাঁর সমগ্র রচনা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে দুই খণ্ডে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ রচনাবলী (২০০৫)। ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে যথাক্রমে উপদ্রুত উপকূল ও ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তি 'ভালাে আছি ভালাে থেকো’ গানের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণােত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯১ সালের ২১ জুন (০৭ আষাঢ় ১৩৯৮) ঢাকায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই প্রতিভাবান তরুণ কবি অকালে মৃত্যুবরণ করেন।