বিশিষ্ট ঐতিহাসিক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের বিচিত্র চিন্তাজগতের অন্যতম উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গ । তারই উজ্জ্বল দিক সংবাদ-সাময়কিপত্র। উনিশ শতকে বাংলাদেশের সংবাদ-সাময়িকপত্র। উনিশ শতকে বাংলাদেশের সংবাদ-সাময়িকপত্র’ নামীয় এই গ্রন্থমালায় এ পর্যন্ত বের হয়েছে ১৫টি খণ্ড । কোথায় এই গ্রন্থমালার ঐতিহাসিক গুরুত্ব? পূর্বসূরী গবেষকবৃন্দ শুধু উনিশ শতকে পশ্চিমবঙ্গ তথা হিন্দু-সম্পাদিত পত্রিকা নিয়ে কাজ করেছেন; কয়েকজন তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন শুধু মুসলিম-সম্পাদিত পত্রিকার ওপর। তাদের কেউ কেউ শুধু পত্রিকার পরিচয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে, কেউবা শুধু রচনা-সংকলনে। মূলত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমিতে পশ্চাদপদ ও উপেক্ষিত পূর্ববঙ্গ হয়েছে অবহেলিত, ছিল অনালােকিত। এখানেই অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এগিয়ে এলেন। পূর্ণতাদানে। অপরিসীম নিষ্ঠা, অনুসন্ধিৎসা ও অন্বেষায় তিনি তুলে ধরলেন উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সংবাদসাময়িকপত্রের ইতিবৃত্ত। গেলাে তিন দশকে বের হয়েছে ১৫টি খণ্ড। আরও কিছু পত্রিকা তাঁর সংগ্রহশালায় জমা হয়েছে। একাধিক কারণ এই গ্রন্থমালা বিপুলভাবে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, উনিশ শতকে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও জনমত জানতে; দ্বিতীয়ত, পূর্ববাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ অনুধাবনে; তৃতীয়ত, পূর্ববাংলার সামগ্রিক চিত্র অবলােকনের প্রাথমিক তথ্যোপকরণ হিসেবে। এসব বিষয় জানতে এ গ্রন্থের কোনাে বিকল্প নেই। মূলত ১৫ খণ্ডের ভূমিকা হচ্ছে প্রথম তথা বর্তমান খণ্ডটি। বাকি খণ্ডগুলি উল্লেখযােগ্য রচনার সংকলন। প্রথম খণ্ডটি প্রকাশের পর এর একাধিক সংস্করণ বের হয়েছে। বর্তমান খণ্ড তৃতীয় খণ্ড। এ খণ্ডে সংকলিত হয়েছে ঢাকা প্রকাশ থেকে। এর আগে তিনটি খণ্ডে সংকলিত করা হয়েছিল এ পত্রিকা থেকে। বর্তমান খণ্ডে তা পুনবিন্যস্ত করা হয়েছে। এভাবে চিহ্নিত হয়েছে উনিশ শতকে বাংলাদেশের আত্মদর্পণ ও হৃৎকম্প। বাঙলার বিদ্বৎসমাজে এই গ্রন্থ নতুন ঢেউ তুলবে আমাদের পূর্বাভিজ্ঞতা তাই বলে।
মুনতাসীর মামুন
মুনতাসীর মামুনের জন্ম ১৯৫১ সালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে এম. এ.. পিএইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। লেখালেখি করছেন ১৯৬৩ সাল থেকে। ছাত্রজীবনে জড়িত ছিলেন ছাত্র-আন্দোলনে এবং ১৯৬৯ সাল থেকে এ-পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছেন প্রতিটি সাংস্কৃতিক ও গণআন্দোলনে। স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম ডাকসু নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সম্পাদক। একই সময়ে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি। তাঁর সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় ডাকসু’র মুখপত্র ছাত্রবার্তা। এছাড়াও বাংলাদেশ লেখক শিবির ও বাংলাদেশ লেখক ইউনিয়নের ছিলেন তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যথাক্রমে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সম্পাদক। ঢাকা নগর জাদুঘরের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন তিনিও একজন । এছাড়াও তিনি জড়িত বিভিন্ন একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বাংলাদেশে লেখালেখির জগতে মুনতাসীর মামুন একটি বিশিষ্ট নাম। সমসাময়িককালে তার মতাে পাঠক নন্দিত লেখক খুব কমই আছে। গল্প, কিশােরসাহিত্য, প্রবন্ধ, গবেষণা, চিত্রসমালােচনা, অনুবাদ ইত্যাদিতে তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ ও সেই সাথে রাজনৈতিক ভাষ্যে অর্জন করেছেন বিশেষ খ্যাতি । উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭০। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার, ড. হিলালী স্বর্ণপদক পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৩), মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক ইত্যাদিতে তিনি সম্মানিত। স্ত্রী ফাতেমা মামুন ছিলেন একজন ব্যাংকার ।
Title :
ঊনিশ শতকে বাংলাদেশের সংবাদ সাময়িকপত্র ৩য় খণ্ড