বাংলা সাহিত্যের সিংহভাগ সাফল্য উনিশ শতকের অর্জন। ঈশ্বর গুপ্ত থেকে নজরুল-জীবনানন্দ পর্যন্ত মহৎ স্থপতিদের সকলেই উনিশ শতকের জাতক। আলোচ্য সময়ের জাগৃতি বিষয়ে ঐতিহাসিক ও সমাজতাত্ত্বিকভাবে একাধিক জ্ঞানগর্ভ পুস্তক রচিত হয়েছে। কালগত ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গুণবান কাব্যালোচনাও কম হয়নি। কিন্তু নবচেতনার পটভূমিতে কবিতার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ হয় তো এ-ই প্রথম। তা-সত্ত্বেও, এই গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এই যে, একজন কবি এবং গবেষকরূপে বর্তমান লেখক আবহমান বাংলা কবিতার অন্তর্গূঢ় প্রবণতা নির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন এবং সেক্ষেত্রে সমাজ-মনস্তত্ত্বকে বিশেষভাবে কাজে লাগিয়েছেন। সেই সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে সাহিত্যের এবং কবিশিল্পীদের সূক্ষ্ম অন্তর্লীন, মধুর বিরোধও গবেষকের দৃষ্টি এড়ায় নি। কেননা, ময়ুখ চৌধুরী কেবল গবেষক নন, কবিও। যাঁরা যথার্থ কবিতার সংগ্রামশীল বিকাশের পরিচয় পেতে আগ্রহী, এই গ্রন্থ তাঁদের চাবিকাঠি হতে পারে।
ময়ুখ চৌধুরী
ময়ুখ চৌধুরী প্রধানত কবি। জন্ম ১৯৫০ সালের ২২শে অক্টোবর, চট্টগ্রামের দক্ষিণ নালাপাড়ায়। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক (বাংলা) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (বাংলা) ডিগ্রি অর্জন করেন। পিএইচ.ডি করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে। অভিসন্দর্ভ ছিল: রবীন্দ্রনাথের পোয়েটিক ওরিয়েন্টেশন। পেশা অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তাঁর অধ্যাপক নাম ড. আনোয়ারুল আজিম। তিনি সংসার করছেন আরেক অধ্যাপক কবি তাসলিমা শিরিনের সঙ্গে। ময়ুখ চৌধুরী বাংলাদেশের সাহিত্যে এক অনিবার্য ও দুর্দমনীয় নাম। তাঁর পরিচিতি একাধিক কারণে পরিব্যাপ্ত। সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্ব ও প্রয়াস তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শিল্পসচেতন কবি হিসেবে, বিরল প্রসাদগুণসম্পন্ন প্রাবন্ধিক ও পরিশ্রমী গবেষক হিসেবে তাঁর অধিষ্ঠান তর্কাতীত। বোধে, অনুভবে ও পারঙ্গমতায় তিনি মনে প্রাণে সৎ, সাহসী ও শুদ্ধ। তাঁর কবিতার সৌন্দর্য এতোটাই স্পর্শকাতর ও অপূর্ব যে, পাঠক কবিতাটি পাঠ করা মাত্রই পৌঁছে যান এক স্বপ্নিল ও রহস্যময় জগতে, যেখানে এক ঐতিহ্যমণ্ডিত শিল্পের প্রতিচ্ছবি কবি দৃশ্যময় করে তোলেন। ভাষার বলিষ্ঠতা ও সুরের গতিময়তা তাঁর দুর্বোধ্য ও জটিল ভাবনাকেও সুখপাঠ্য করে দেয়। কি শব্দ প্রয়োগে, কি বক্তব্যে, কি বিন্যাসে, কি আঙ্গিকে, কি উপমায়, কি ছন্দে তিনি এক মেধাবী কবি। তাঁর প্রকাশিত কাব্য : কালো বরফের প্রতিবেশী (১৯৮৯); অর্ধেক রয়েছি জলে অর্ধেক জালে (১৯৯৯); পলাতক পেন্ডুলাম (২০১৬) তোমার জানলায় আমি জেগে আছি চন্দ্রমল্লিকা (২০০০); প্যারিসের নীলকাট (২০০১); আমার আসতে একটু দেরি হতে পারে (২০০২)। এবং প্রবন্ধ-গ্রন্থ : উনিশ শতকের নবচেতনা ও বাংলা কাব্যের গতিপ্রকৃতি (১৯৯৬)। সম্পাদিত গ্রন্থ: অসভ্য শব্দ (১৯৭৩); সাহিত্যপত্র: প্রতীতি (১৯৬৮); কবিতা (১৯৭০)। আসছে, চরণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুণ্ডুহীন, ক্যাঙ্গারুর বুকপকেট।
Title :
উনিশ শতকের নবচেতনা ও বাংলা কাব্যের গতিপ্রকৃতি