ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ উজানে গ্রামের প্রতিকূল পরিবেশে কয়েকজন দরিদ্র অসহায় মানুষের বেঁচে থাকার কঠোর সংগ্রামের গল্প। এদের মতো মানুষ বাংলাদেশের প্রতি অঞ্চলেই আছে, যার জন্য এরা হয়ে উঠেছে প্রতীকী।
দুই হাজার টাকার বিনিময়ে সীমান্তের নদী দিয়ে গরু চোরাচালান করে আনার চুক্তিতে যারা দায়বদ্ধ তাদের ভাগ্যে থাকে অনিশ্চয়তা, অমানুষিক পরিশ্রম, নিরন্তর ঝুঁকি এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা। এ সত্ত্বেও কেবল বেঁচে থাকার জন্য তারা জীবন বাজি রেখে গরু নিয়ে নদীতে নামে এবং নদীর স্রোত আর সীমান্ত রক্ষীদের গুলি বর্ষণের মুখে পারাপারের লড়াই শুরু করে। কেউ এই লড়াইয়ে জেতে, কেউ হেরে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
এমন কয়েকজন মানুষের গল্প নিয়েই উজান উপন্যাসের শুরু। কাহিনী অগ্রসর হয়ে নদী তীরবর্তী জনপদে গরু চোরাকারবারি, নারী পাচারকারী এবং জমি দখলকারীদের শোষণ-শাসনের বর্ণনা করেছে সংক্ষেপে কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য ভাবে। কিভাবে অসহায় দরিদ্র মানুষ শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও জমি-জমা হারায় এবং বাস্তিুভিটা থেকে বিদ্যায় নিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দেয় ভিন্ন জীবনযাপনের আশায়, সেই প্রক্রিয়ার এক আন্তরিক বিবরণ রয়েছে উপন্যাসে। প্রক্রিয়াটি নতুন নয়, কিন্তু যে কাহিনীর অবতারণা এবং ঘটনার ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে অভিনবত্ব আছে।
একটি বাংলা দৈনিক দুই হাজার টাকার বিনিময়ে নদী পার হয়ে গরু চোরাচালানের ঘটনার খবর পড়ে লেখক উপন্যাসটি লিখতে উদ্বুদ্ধ হন যার উল্লেখ রয়েছে কাহিনীর শেষে। এই ছোট খবরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা এবং কল্পনা মিশিয়ে লেখক যা উপহার দিয়েছেন তার মধ্যে ডকুমেন্টরির স্বাদ পাওয়া যায়।
হাসনাত আবদুল হাই
হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায়। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশাের, ফরিদপুর শহরে । কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনােমিকস্ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যােগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে ছােটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছােটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালােচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল। বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্রবাস জীবনে। প্রকাশিত ছােটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্রমণ-কাহিনী ছয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মােহাম্মদ আকরম খাঁ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক।