চল্লিশ বছর পর বাঘের পেট থেকে বেরিয়ে আসে নগ্ন এক মানুষ। পৌষের কুয়াশাঢাকা এক হিমভােরে প্রথম তাকে দেখা যায় নয়নচরে। পায়ের কাছে সাপ নিয়ে বসে থাকে, ব্যাঙের মতাে জলের ওপর হাঁটতে পারে, ঈগলপাখির ঠ্যাং ধরে উড়তে পারে। উজানগার ভূস্বামী অনাদি দত্ত তাকে আবু তােয়ব। বলে শনাক্ত করেন। ধীরে ধীরে বাঘামামা নামে তিনি হয়ে ওঠেন প্রণম্য। বদলে দেন নীলাক্ষি-তীরের জনপদের সংস্কৃতি। কিন্তু মানুষ কি চল্লিশ বছর বাঘের পেটে থাকতে পারে? প্রশ্ন তােলেন আবদুল কায়েদ। একদিন মাটি খুঁড়তে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন এক প্রাচীন শিলালিপি। সেই লিপিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার ছেলে মােহন রেজা শুরু করে জ্ঞান অন্বেষণ। তার গায়ে ভেসে বেড়ায় বুনাে কলমির ঘ্রাণ, ঘুমে-জাগরণে শুনতে পায় হট্টিটি পাখির ডাক। ওদিকে ভরা পূর্ণিমা রাতে মানুষ, পশুপাখি আর কীটপতঙ্গ জেগে থাকে অন্ধ বাঁশিওয়ালা শেকার বাঁশির সুরে। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের সমাজ ও রাজনীতি, রক্ষণশীলতা ও উদারপন্থা, জ্ঞান ও নির্জন এবং বহুমাত্রিক সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব নিয়ে রচিত এই উপন্যাস স্বকৃত নােমানের শিল্পযাত্রার এক অনন্য স্মারক, যেখানে তিনি করেছেন সৃজনশক্তির জাদুকরি প্রয়ােগ।
স্বকৃত নোমান
স্বকৃত নােমান প্রতিশ্রুতিশীল ঔপন্যাসিক। জন্ম ১৯৮০ সালের ৮ নভেম্বর, ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলােনিয়ায়। জ্ঞান অন্বেষণ ও শিল্পসৃষ্টিকে জীবনের প্রধান কাজ মনে করেন। স্বভাবে অন্তর্মুখী, আবেগপ্রবণ, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক। রাজনটী উপন্যাসের জন্য এইচএসবিসি-কালি ও কলম কথাসাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার উপন্যাস বেগানা, হীরকডানা ও কালকেউটের সুখ পাঠকনন্দিত। বর্তমানে তিনি সাপ্তাহিক সংবাদ ম্যাগাজিন এই সময়-এর সহযােগী সম্পাদক হিসেবে ঢাকায় কর্মরত। স্ত্রী নাসরিন আক্তার নাজমা ও মেয়ে নিশাত আনজুম সাকিকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত জীবন ।