তুতেন খামেনের মমি রহস্য
তুতেন খামেন ছিলেন প্রাচীন মিশরের একজন ফারাও। “ভ্যালি অব দ্য কিং” বা কিং উপত্যকা নামে পরিচিত মিশরীয় রাজাদের সমাধিস্থলে ফারাও তুতেন খামেন এর সমাধি ছিল একমাত্র অক্ষত সমাধি যা কেউ খুঁজে পায়নি। কারণ কিং উপত্যকায় আবিষ্কৃত প্রায় সবগুলো সমাধিই অনেক পূর্বে চোর ডাকাতদের দ্বারা লুট হয়ে গিয়েছিল। ১৯২২ সালে কে.ভি-৬২ নাম দেয়া তুতেন খামেন এর সমাধিটি আবিষ্কার করে ব্রিটিশ গবেষক হাওয়ার্ড কার্টার ও তার পরিচালিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক দল। স্বর্ণ-নির্মিত বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস পত্রে পরিপূর্ণ ছিল তুতেন খামেন এর বিলাস বহুল সমাধিক্ষেত্র। তার সমাধি থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে অনুমান করা হয় যে, ফারাও তুতেন খামেন অনেকটা রুগ্ন ছিলেন এবং তার অল্প সময়ের রাজত্বকালে তিনি তার পিতার শুরু করা ধর্মীয় সংস্কার বাতিল করতে চেয়েছিলেন। ফারাও তুতেন খামেন ছিলেন মিশরীয় ফারাওদের ১৮তম বংশের রাজা যিনি খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩২-১৩২৩ অব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ফারাও তুতেন খামেন তার এই নামটি ছাড়াও “তুতেন খামুন”, “তুতেন খাতেন” বা শুধু “রাজা তুত” নামেও পরিচিত ছিলেন। নামটি তার কফিনের উপর প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক ভাষায় লেখা ছিল। এই ভাষায় কোনো vowel না থাকায় নামের সঠিক উচ্চারণটি পাওয়া সম্ভব হয়নি। তুতেন খামেনের জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৪১ অব্দের আশেপাশে। তার বাবা ছিলেন ফারাও আখেন-আতেন যিনি “আতেন” বা সূর্য দেবতার পূজা প্রচলনের মাধ্যমে একটি নতুন ধর্মীয় সংস্কার প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেন। ঐ সময়ে মিশরীয়রা মূলত বায়ু বা শ্বাস-প্রশ্বাসের দেবতার পূজা করতো। নিজের ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করতে তিনি অন্যান্য সকল ধর্মের উপাসনালয় ও দেব-দেবীদের প্রতিকৃতি ধ্বংসের নির্দেশ দেন। ফলে রাজ্য জুড়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এই সময় অজানা কারণে হঠাৎ তার বাবা মারা যায়। ফলে অল্প বয়সেই তুতেন খামেন কে রাজ্য পরিচালনার ভার গ্রহণ করতে হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩২ অব্দে, মাত্র ৯ বছর বয়সে তুতেন খামেন সিংহাসনে আরোহণ করেন। এত অল্প বয়সে রাজা হওয়ায় তিনি “কিশোর রাজা” নামে পরিচিতি পান। ফলে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে উপদেষ্টাদের উপর নির্ভর করতে হত। একটা সময় এসে তিনি তার বাবার শুরু করা ধর্মীয় সংস্কার বাতিল করতে চেষ্টা করেন। তিনি তার পিতার এই কাজের নিন্দা করেন। এমনকি তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে তার নাম থেকে “আতেন” শব্দটি বাদ দিয়ে দেন।