"তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
কলকাতায়, এসিয়াটিক সােসাইটির সভায়, উইলিয়ম জোন্সের বিখ্যাত বক্তৃতাটির। (২ ফেব্রুয়ারি ১৭৮৬) দু-শাে দু-বছর আজ পূর্ণ হলাে। এ-বইয়ের ভূমিকা লিখতে বসে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আমার মনে হচ্ছে ওই বক্তৃতাটির দু-শাে দু-বার্ষিকী উদযাপন করছি। জোন্সের বক্তৃতার পর উদ্ভূত, বিকশিত ও অনেকটা অবসিত হয়ে গেছে তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান। উনিশশতক নেই, এ-শাস্ত্রের স্বর্ণযুগও আর নেই। বাঙলায় বিশশতকের শুরু থেকে চর্চা হচ্ছে তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের। ভাষাবিজ্ঞান ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এক সময় একার্থক হয়ে উঠেছিলাে বাঙলায় : আমাদের বিশ্রুত ভাষাবিজ্ঞানীরা সবাই তুলনামূলক-ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানী। কিন্তু বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে বাঙলা ভাষায় তুলনামূলক-ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও প্রণালিপদ্ধতিবিষয়ক কোনাে পাঠ্যগ্রন্থ নেই। আমাদের ভাষাবিজ্ঞানীরা তত্ত্ব ও প্রণালিপদ্ধতিতে উৎসাহী ছিলেন।
; তথ্য ও বিবরণের প্রতিই ছিলাে তাদের আগ্রহ। তাঁদের বই পড়ে বিভিন্ন ভাষার সম্পর্ক, বাঙলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি; শুধু জানতে পারি না সে-তত্ত্ব ও কৌশল, যার প্রয়ােগে তারা উঘাটন করেন বিভিন্ন ভাষার সম্পর্ক, বিবৃত করেন বিশেষ ভাষার ইতিহাস। শিক্ষার্থীদের এশাস্ত্রটি শেখানাের দায়িত্ব নেয়ার পর বিপন্ন বােধ করি আমি; কারণ বাঙলা ভাষায় এমন কোনাে বই নেই, যেটির ওপর নিজে নির্ভর করতে পারি, এবং নির্ভর করার পরামর্শ দিতে পারি শিক্ষার্থীদের। ইংরেজিতে রয়েছে তুলনামূলক-ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক বহু বই; এমনকি গত কয়েক দশকেও রচিত হয়েছে এ-শাস্ত্রের তত্তপ্রণালিপদ্ধতিবিষয়ক বেশ কিছু বই। তত্ত্ব ও প্রণালিপদ্ধতিতে আমি বিশ্বাস করি; তাই এ-বইটিতে জোর দিয়েছি তত্ত্ব ও পদ্ধতির ওপর। কারণ তত্ত্ব ও প্রণালিপদ্ধতি জানলে শিক্ষার্থী নিজেই হয়ে উঠতে পারেন বিজ্ঞানী; অন্যের পরিবেশিত তথ্য ও বিবরণের ওপর নির্ভর করার তার দরকার পড়ে না। বইটি রচনায় আমি দ্বিধাহীনভাবে সাহায্য নিয়েছি বিভিন্ন বইয়ের বিশেষ করে ইংরেজিতে লেখা বইয়ের; এবং দরকার মতাে সে-সব বই থেকে দু-হাতে নিতেও দ্বিধা করি নি। কারণ এ-বইটি জ্ঞানার্থীদের কল্যাণের কথা ভেবে লিখেছি; এবং এটিই আমার একমাত্র বই, যার লক্ষ্য বিশেষ এক শ্রেণীর জ্ঞানার্থীর কল্যাণসাধন।
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।