জন্ম শেরপুর জেলায়, ১৯৫৪ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৭৭ সালে। ১৯৮৩ সালে জার্মানির বার্লিনে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ জার্নালিজম থেকে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা লাভ করেন । তিনি বৃটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর প্রথম বাংলাদেশি ফেলাে হিসেবে রয়টার্স-এর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও রাজনীতি বিষয়ে পড়াশােনা করেন ১৯৮৮-৮৯ সালে । ১৯৯২-৯৩ সালে কমনওয়েলথ টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রােগ্রামের ফেলােশিপ লাভ করে ভারতীয় পার্লামেন্টের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট অফ কন্সটিটিউশন অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ-এ সংবিধান ও পার্লামেন্টের ওপর পড়াশােনা করেন।
দীর্ঘ চার দশকের পেশাজীবনে তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে তার শেষ কর্মস্থল ছিল বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। ১৯৮৭ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনপ্রিয় মাসিক ম্যাগাজিন ‘নতুন ঢাকা জাইজেস্ট'-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের কারণে অনুবাদের কাজে হাত দেন এবং প্রায় তিন দশকে ৪৫টি পাঠকপ্রিয় গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন, যার মধ্যে নােবেল বিজয়ী সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ-এর কায়রাে ট্রিলজি, উইজডম অফ খুফু, থেবস অ্যাট ওয়ার, আইভাে অ্যানড্রিচ-এর দ্য ব্রিজ অন্য দ্য দিনা, ভিএস নাইপল-এর হাফ অ্যা লাইফ, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর মেমােরিজ অফ মাই মেলানকোলি হােরস, ওরহান পামুক-এর ইস্তাম্বুল মেমােরিজ অ্যান্ড দ্য সিটি উল্লেখযােগ্য।
এছাড়া তিনি খুশবন্ত সিং-এর ট্রেন টু পাকিস্তান, দিল্লি, দ্য কম্প্যানি অফ ওম্যান, টুথ লাভ অ্যান্ড এ লিটল ম্যালিস, বারিয়্যাল অ্যাট সী, দ্য সানসেট ক্লাব, আই শ্যাল নট হিয়ার দ্য নাইটিঙ্গেল, উইলিয়াম ড্যালরিম্পল-এর দ্য লাস্ট মােগল, হােয়াইট মােগল, সিটি অফ জ্বিনস, নিকোলাও মানুচির মােগল ইন্ডিয়া, ওরিয়ানা ফালাচির ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরি, আমিন মালােফ-এর সমরকন্দ, কোলম্যান বার্কস-এর দ্য সােল অফ রুমী, জি এল গ্যারেট-এর দ্য ট্রায়াল অফ বাহাদুর শাহ জাফর, মির্জা হাদি রুসওয়া’র ওমরাও জান, গুলজারএর মির্জা গালিব এবং অন্যান্য গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন ।
খুশবন্ত সিং
খ্যাতিমান ব্যক্তিদের আত্মজীবনীও সাধারণভাবে একঘেঁয়ে ও ব্যাপকভাবে বিরক্তিকর। কারণ আত্মজীবনীর লেখকরা নিজেদেরকে তারা যা ছিলেন প্রায় ক্ষেত্রেই তার চেয়ে বড় দেখাতে চেষ্টা করেন এবং চারপাশে সংঘটিত সবকিছুর সাথে নিজের ভূমিকাকে প্রধান করে তােলেন । কিন্তু খুশবন্ত সিং এর আত্মজীবনী টুথ লাভ অ্যান্ড অ্যা লিটল ম্যালিস এর ব্যতিক্রম । ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভক্তির উপর তার ট্রেন টু পাকিস্তান’ কালজয়ী এক উপন্যাস যেটি ১৯৫৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং ছয় দশক পরও এটি জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। খুশবন্ত সিং-এর পরিবার নয়াদিল্লির অন্যতম নির্মাতা। আত্মজীবনীতে পারিবারিক ইতিহাস ও স্মৃতিচারণ ছাড়া উঠে এসেছে লন্ডনের কিংস কলেজে তার যাপিত সময় লাহােরে আইন ব্যবসা পদশভাগ, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যােগদান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সম্পর্কের বিষয়গুলাে । আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উল্লেখযােগ্য ঘটনা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন কাছে থেকে। নিজের জীবনী লিখতে তিনি নিজের ত্রুটিবিচ্যুতি আড়াল করেননি এমনকি নিজের প্রথম ব্যর্থ যৌন উদ্যোগের ঘটনাও পাঠকদের জানিয়েছেন । ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর তার স্ত্রী মানেকার সাথে ইন্দিরা গান্ধীর বৈরি সম্পর্কের একটি অধ্যায় আত্মজীবনী প্রকাশিত হওয়ার আগেই সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ইন্ডিয়া টুডে প্রকাশ করে । মানেকা গান্ধী এর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেন এবং আদালত খুশবন্ত সিং-এর আত্মজীবনী প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপ করলে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর্যন্ত স্থগিত থাকে গ্রন্থটির প্রকাশনা। প্রকাশনা বিলম্বিত হলেও আদালত লেখকের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সীমারেখা টেনে দেয়নি। খুশবন্ত সিং এর উপন্যাস পাঠকরা যেমন রুদ্ধশ্বাসে পড়েন তার আত্মজীবনীও একইভাবে পাঠককে টেনে নিয়ে যায় এক ঘটনা থেকে আরেক ঘটনায় । টুথ লাভ অ্যান্ড অ্যা লিটল ম্যালিস ভারতে প্রকাশিত হওয়ার এক বছর পরই ২০০৩ সালে এটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সালে নালন্দা প্রকাশনী' এটির নতুন সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।