ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ সনজুর কানের কানের কাছে মুখ এনে তোতন ফিসফিস করে বলল, ‘ও ও ওদিকে তাকা, দেখ ক্কে ক্কে তাকিয়ে আছে।’ হাতের লাল রঙের আইসক্রিমটাতে আরেকটা কামড় দিল সানজু। খুব আরাম করে সেটা চিবাতে লাগল, তারপর সেটুকু খেয়ে আবার কামড় দিল, কিন্তু তোতনের কথার কোনো উত্তর দিল না। তোতন যেদিকে তাকাতে বলল, তাকাল না সেদিকেও। সনজুর তাহ খামচে ধরে তোতন এবার একটু রেগে গিয়ে বলল,‘দেখলি না ক্কে ক্কে তাকিয়ে আছে।’ সজনু এবার তাকাল। একটা লোক তাকিয়ে আছে তাদের দিকে-গলায় মাফলার, গায়ে ময়লাওয়ালা কোট এবং একনাগারে দাঁত খোঁজাচ্ছে সে খুব আনন্দ নিয়ে। লোকটা তাদের পিছু নেয়, তারা যেখানে যায় সেখানে গিয়েই উপস্থিত হয় সে। অদ্ভুত একটা স্বভাব আছে তার-সবজি খায় সে প্রতিদিন, কাঁচা সবজি। এ ছাড়া অন্য কিছু খায় না। লোকটাকে একদিন দড়ি কিনতে দেখে তারা চমকে যায় এবং বুঝে যায়-লোকটা ভয়ঙ্কর! লোকটা থেকে পালাতে হবে তাদের। কিন্তু পালাতে গিয়েই আরেকটা বিপদে পড়ে যায় তারা। এমন বিপদে তারা কোনোদিন পড়েনি।
সুমন্ত আসলাম
আজন্ম লালিত স্বপ্নকে যে সার্থক করে তুলতে পারে, সে-ই সত্যিকারের ভাগ্যবান। আমরা বন্ধুরা তাই সুমন্তকে সেসব হাতে গােনা ভাগ্যবানদের একজন বলে মানি, গর্বিত হই সুমন্তকে নিয়ে; হিংসায়ও পুড়ি কখনাে কখনাে । কারণ একটাই—লেখালেখির স্বপ্নটাকে বিফলে যেতে দেয়নি সুমন্ত আসলাম । বরং শখের লেখালেখির সঙ্গে সখ্য গড়ে সে এখন আদ্যোপান্ত একজন পাঠকপ্রিয় লেখক । ২০০১ সালে ‘স্বপ্নবেড়ি’তে গল্প লেখায় যে মেধার স্বাক্ষর সে রেখেছিল, তা উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমানভাবে । বন্ধু বলে সমালােচনার কাচি-ছুরির হাত থেকে রেহাই মেলে না। লেখক সুমন্তর কিন্তু সব কিছুর শেষে প্রতিবারই হার মানতে হয়। আমাদের, মুগ্ধ হতে হয় তার লেখায় । অপেক্ষায় থাকতে হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পের, কিংবা অন্য কোনাে লেখার। কিংবা আসন্ন বইমেলার—কখন প্রকাশিত হবে সুমন্তর নতুন বই। দৃপ্ত সাহসী ভঙ্গি, চিবুকের সজীব ঔদ্ধত্য দেখে কেউ কেউ অহঙ্কারী বলে ভুল ভাবে সুমন্তকে । কিন্তু আমরা জানি, ভেতরের মানুষটা বড় বেশি সরল, আবেগে টলােমলাে-কখনাে যেন সে দন্তন্য রূহমান, কখনাে বা রাশীক । তাই তাে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সে গড়ে তােলে ‘Childream Society',' তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টায় তাদের সাথেই মিশে যায় সে প্রতিনিয়ত। শুধু স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা নয়, অন্যের মধ্যে স্বপ্নের শিখা জ্বালিয়ে দেয়ার অবিশ্বাস্য এক ক্ষমতা আছে সুমন্তর। তাই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি একদল কিশাের-কিশােরী ঘিরে থাকে তাকে । অনুপ্রেরণা মেনে তার মতােই হতে চায় তারা। নিজের টুকরাে টুকরাে স্বপ্ন-সাধ তাদের মধ্যে বুনে দিয়ে ঘুরে ফেরে সুমন্ত, ফেরে নিজের ছােট্ট জগন্টাতে । তাকে দেখে আনন্দে গা ঘেঁষে আদর জানায় পােষা সাদা বেড়ালটা, মাছগুলাে খলবল করে ওঠে অ্যাকুরিয়ামে, এমনকি তার অপেক্ষায় থাকা লেখালেখির টেবিলটাও যেন হেসে ওঠে। একবার-সুমন্তের হাতে নতুন কোনাে চরিত্রের, নতুন কোনাে গল্পের জাল বােনা দেখবে বলে!