হাঁটতে হাঁটতে টং দোকানে চলে এলাম। রিজু এখনও বসে আছে। খুব আয়েশ করে বিড়িতে টান দিচ্ছে। আমিও বিড়ি ধরালাম, মনে হচ্ছিল চিবিয়ে খাবো। চোখ দুটো লাল হয়ে আসছিল, চোখের পানি টলমল করা চোখ জোড়া থেকে পানি গরগর করে পড়ছিল। বুকের ভিতর চাপা কষ্টের স্পুলিঙ্গ ঘটছিল। কষ্ট সহ্য হচ্ছিল না। রিজুকে বললাম,
- এছাড়া আর কি কিছু আছে কষ্ট ভুলার?
রিজু পকেট থেকে একটা কাগজের পুটলা বের করে বলল,
- নে, এইটা সিগারেটে ভরে আগুন লাগিয়ে টান দে।
- এইটা কী?
প্রশ্ন করতেই সে বলল,
- টেনেই দেখ।
তখন আয়েশ করে টানতে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে চোখগুলো নিমজ্জিত হয়ে আসছিল। চোখ-মুখ ঝাপসা, সবকিছু ঘোলাটে, সবুজ পাতার প্রত্যেকটি টানে চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই পুড়াচ্ছি দুঃখ। বুঝতে পারছিলাম আমি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি।
পরদিন সকালে চোখ খুলে দেখি আমি খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছি। উঠলাম সেখান থেকে। ফোনটা হাতে নিতেই দেখি বাড়ি থেকে ৩৪টা কল। বাড়ির দিকে রওনা দিতেই স্নেহলতার কথা মাথায় ঘুরঘুর খেলো। রিজুর দেওয়া পুটলিটা বের করে আবার টান দেওয়া শুরু করলাম।
এভাবেই চলছে আমার জীবন। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। আগের চেহারা আর নেই। নেশার সাথে যুদ্ধ করে এক বছর কেটে গেছে। গত এক বছর আগে স্নেহলতা সবুজ পাতা দিয়ে হাত রাঙিয়েছিল, আর আমি গত এক বছর ধরে সবুজ পাতা দিয়ে দুঃখ পুড়াই। রিজুর মুখে শুনেছিলাম, স্নেহলতার বিয়ে হয়েছিল ২৭-০৫-২০১৬ ইং তারিখে। এর দু’দিন পরেই তার জন্মদিন ছিল। আজ স্নেহলতার এনিভার্সারি ডে। দু’দিন পরেই জন্মদিন। এনিভার্সারির কেনাকাটা করতে বাজারে এসেছিল স্নেহলতা। হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল। এক বছর পর দেখা। দেখা হতেই চোখ দু’টো হাসের ডিমের মতো করে তাকালো। সে প্রশ্ন করল,
- চেহারায় এ কী হাল করেছো? নেশা করো? তুমি একটা নেশাখোর? ছিঃ! তোমার কাছ থেকে এসব আশা করিনি।
মনে মনে ভাবছিলাম, আজ আমার নিঃশ্বাসে মিশে থাকা হেরে যাওয়া কাহিনীর মূল চরিত্র তুমি। হে প্রাক্তন! তোমার মতো কেউ কখনো আমায় এতটা পাল্টে দেয়নি।
গত তিন বছর স্নেহলতার জন্মদিন আমি কেক কেটে পালন করেছিলাম। এবারও একটা কেক কাটবো, কিন্তু একটা পার্থক্য থাকবে। অন্য বছর কেক কাটায় স্নেহলতা পাশে থাকতো, আর এবছর থাকবে গাজা। তোমায় চেয়েছিলাম নিজের জন্য, তোমায় ভুলেও থাকি নিজেরই জন্য। দেখো কতো স¦ার্থপর আমি!