এইচ জি ওয়েলস একাধারে কল্পবিজ্ঞানের লেখক, ঔপন্যাসিক, শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ। পুরো নাম হার্বার্ট জর্জ ওয়েলস। কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক উপন্যাস ও গল্পের জন্য তিনি সারা বিশ্বে পরিচিত। জুলভার্নের মতো তাঁকেও অনেকে 'কল্পবিজ্ঞানের জনক' বলে গণ্য করেন।
১৮৬৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের কেন্টে ওয়েলসের জন্ম। বাবা জোসেফ ওয়েলস ছিলেন পেশাদার ক্রিকেটার। মায়ের নাম সারাহ নীল। তরুণ বয়সে ওয়েলস এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। তখন সময় কাটাতে গিয়ে তিনি বইয়ের প্রতি আসক্ত হন। বই তাঁর সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। পড়া থেকেই ধীরে ধীরে তিনি লেখালেখিতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ক্ষেত্র ছিল প্রথমে হিসাবরক্ষণ বিদ্যা। জীববিজ্ঞানের প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন এবং ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের একজন জোর প্রবক্তা ছিলেন। ১৮৮৪ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের রয়েল কলেজ অব সায়েন্সে পড়াশোনা করেন। ১৮৮৭ সালে শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে তিন বছর কর্মরত ছিলেন। ১৮৯০ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ড থেকে বিএসসি ডিগ্রি পান। ১৮৯৩ সালে তিনি একমাত্র লেখালেখিতেই আত্মনিয়োগ করেন। রাজনৈতিক দর্শনে তিনি ছিলেন সমাজতান্ত্রিক। শান্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধকে সমর্থন করেন। তাঁর লেখকজীবনের মধ্যপর্বের (১৯০০-১৯২০) রচনাগুলোর মধ্যে কল্পবিজ্ঞানের উপাদান কম। এগুলোতে বরং মূর্ত হয়েছে নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজের জীবন (দ্য হিস্ট্রি অব মি. পলি) ও নারী অধিকারসহ (অ্যান ভেরোনিকা) নানা বিষয়। তবে কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক রচনাই তাঁকে অমর করেছে। এ ধারার উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে 'টাইম মেশিন' (১৮৯৫), 'ইনভিজিবল ম্যান' (১৮৯৭), 'দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস' (১৮৯৮) প্রভৃতি। টাইম মেশিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ১০০ বছর পর ১৯৯৬ সালে এটি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯০৩ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত তিনি ফেবিয়ান সোসাইটির সদস্য ছিলেন। ১৯৩৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন তাঁকে ডক্টরেট অব লিটারেচার সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৪৬ সালের ১৩ আগস্ট এইচ জি ওয়েলস লন্ডনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।