'তেইশ নম্বর তৈলচিত্র' আলাউদ্দিন আল আজাদ রচিত প্রথম উপন্যাস। একে তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। একজন চিত্রশিল্পীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং তার জীবন ও প্রেমকে কেন্দ্র করে এ উপন্যাসের ঘটনা আবর্তিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের মনস্তাত্ত্বিক ধারায় এটি একটি অন্যতম সংযোজন। একজন চিত্রশিল্পীর জীবনের অনুভব এবং তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রেম ও প্রাণের স্বরূপ এ উপন্যাসে নতুন রূপে বিশ্লেষিত হয়েছে। ১৯৬০ সালে ‘পদক্ষেপ’ পত্রিকার ঈদসংখ্যায় এ উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
বিস্তারিত জানুন উপন্যাসের ভেতর
আলাউদ্দিন আল আজাদ
আলাউদ্দিন আল আজাদ নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার অন্তর্গত রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তারিখ ৬ মে ১৯৩২। পিতা গাজী আবদুস সােবহান, মাতা আমেনা খাতুন। প্রপিতামহ মাদারি প্রধান প্রাজ্ঞব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন এবং মাতামহ শাহ আমানত আলি একজন লােককবি । পৌরাণিক ও কিংবদন্তীর নদ ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী এই ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় পল্লী প্রাচীন সুবর্ণবীথি, আজকের সােনারগাঁও ভূখণ্ড যা একদা মসলিনের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ছিল, তার পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত। | চার কন্যার পর বহু আকাঙ্খর ধন পুত্র, শিশুটির ডাকনাম রাখা হয় বাদশাহ। কিন্তু সম্রাট অচিরেই নিঃস্ব হয়ে যান যখন তার দেড় বছর বয়সে জননী মৃত্যুবরণ করেন; এবং দশ বছর বয়সে জনক। গ্রামীণ আত্মীস্বজনেরা জমিজমা দখল করেন। এ দিকে পঞ্চাশের মন্বন্তর। নবীন কিশাের আজাদের মাথায় যেন অলৌকিকভাবেই একটি শিখা জ্বলে উঠল, তিনি উপলব্ধি করলেন, এখন শিক্ষাই তার একমাত্র অস্ত্র। বইয়ের মধ্যে এক রােমাঞ্চকর জগত আবিষ্কার করলেন। মেধা বিকশিত হতে থাকে, স্বপ্নের মত। তিনি প্রত্যেক শ্রেণীতে প্রথম হতে লাগলেন। নারায়ণপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। বুঝলেন, গাঁয়ে লেখাপড়া হবে না। একটা ছােট টিনের সুটকেস হাতে নিয়ে পাড়ি জমালেন ঢাকায়। পৌছবার পরদিনই ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি হয়ে গেলেন। প্রথম বিভাগ হওয়ায় ফ্রি স্টুডেন্টশিপ পেলেন এবং ষােল টাকা মহসিন বৃত্তি । রাতের বেলায় খবরের কাগজে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। তার পালয়িত্রী দাদিমা বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ডাক্তারি পড়বেন; কিন্তু যে জীবন, খরচ এবং সময় কোনটাই দেয়া সম্ভব ছিল না। বাংলা অনার্স পরীক্ষায় দীর্ঘ বারাে বছর পর তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন; এবং মাস্টার্সেও বিভাগীয় ছাত্রদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। পরে প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষা মারফত বৈদেশিক বৃত্তি অর্জন করলেন এবং উচ্চশিক্ষা লাভার্থে ইংল্যান্ড যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর অব ফিলিসফি (ph.D) ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৭০)। এ সময় রয়াল সােসাইটিরও ফেলাে নির্বাচিত হন। (F.R.A.S)। পরে আমেরিকান আধুনিক ভাষা সমিতির সদস্য হয়েছেন (M.M.L.A)। অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে উচ্চ প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন (১৯৮৩)। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক।