"তাযকিয়াতুন নাফস" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
নাফসের পরিশুদ্ধি দীনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নাফস পরিশুদ্ধ হওয়া ছাড়া মানুষের ঈমান ও ইসলাম কখনাে বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ হয় না। উল্লেখ্য যে, মানুষের দুটি দিক রয়েছে। একটি হলাে বাহ্যিক, অপরটি হলাে অভ্যন্তরীণ বা আত্মিক । ইসলাম যেমন মানুষের বাহ্যিক দিককে পূত-পবিত্র করতে চায়, তেমনি তার ভেতরের দিকটিকেও সম্পূর্ণ কলুষমুক্ত ও সুন্দর করতে চায়। মানুষের এ অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ আত্মিক দিকটির পরিশুদ্ধিকেই কোরআনের ভাষায় ‘তাযকিয়াহ' বলা হয়। বস্তুত একজন মানুষ তার নাফসকে পবিত্রকরণ ও মনের কলুষ দূরীকরণের মাধ্যমে নিজের আবেগ-অনুভূতিকে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের কাজে এমনভাবে নিয়ােজিত করতে পারে যে, দীনের বাহ্যিক ‘ইবাদাতসমূহ স্বয়ং তার আবেগ ও নাফসের দাবিতে রূপায়িত হয়ে যাবে। যদি কেউ বাহ্যিক ও প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সালাত, সাওম, যাকাত ও হাজ্জ পালন করে; কিন্তু তার নাফস পবিত্র ও পরিশুদ্ধ না হয়, তা হলে তার সে ‘আমাল ঐ ফুলের মতাে, যার রং সুন্দর ও আকর্ষণীয়; কিন্তু তাতে কোনাে সুঘ্রাণ নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে যদি কোনাে ব্যক্তিকে পরীক্ষা করতে হয়, তা হলে অবশ্য দেখতে হবে যে, তার অন্তর কতােখানি পবিত্র ও কলুষমুক্ত। আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাহর অন্তরকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন; বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানকে নয়।<br>
কাজেই নাফস পরিশুদ্ধ করা এবং এ উদ্দেশ্যে তার উপর সুদৃঢ় নিয়ন্ত্রণ ও শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা দীনের একটি অতি অপরিহার্য কর্তব্য ও সর্বাপেক্ষা বড় জিহাদ।<br>
আমি এ গ্রন্থটিতে আমার সামান্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বক্ষ্যমাণ বিষয়ে গবেষণা করে যতটুকু সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি, তাই কেবল ‘ইলমের প্রচার ও প্রসারের দায়িত্বানুভূতি থেকেই তোলে ধরতে চেষ্টা করবো এবং কোরআন ও হাদীসের আলোকে ‘তাযকিয়াতুন নাফস’ বলতে কী বোঝায়, নাফস ও কালবের ব্যাধি ও ত্রুটিগুলো কি কি এবং এগুলো দূরীভূত করার কী কী পথ রয়েছে, প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করতে প্রয়াস পাবো, ইনশাআল্লাহ।