ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে তাওহিদ। তাওহিদপন্থীদের জন্যই ঘোষিত হয়েছে জান্নাত। নিষ্কলুষ তাওহিদ নিয়ে যারা মহান প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হবে, তারা লাভ করবে মহা সফলতা। পক্ষান্তরে যারা তাওহিদকে প্রত্যাখ্যান করবে কিংবা যাদের তাওহিদ ত্রুটিযুক্ত থাকবে, প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার দিন তারা চরম আক্ষেপে ভুগবে এবং অবশেষে নিক্ষিপ্ত হবে অপরাধীদের আবাসস্থল জাহান্নামে।
তাওহিদের মৌলিক বিষয়াদির জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজে আইন। যেহেতু তাওহিদ সকলের জন্য, তাই তাওহিদের মৌলিক জ্ঞানকে রাখা হয়েছে অত্যন্ত সহজ, সরল এবং সকলের বোধগম্যরূপে। খ্রিষ্টানদের ত্রিত্ববাদের মতো জটিল কোনো সমীকরণ এতে নেই। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পরবর্তীরা তাওহিদের মূল বিষয়ের আলোচনা কমিয়ে দিয়ে শাখাগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভ্যন্তরীণ চরম দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে। ফলে মুসলিমদের ঐক্যের ভিত্তি তাওহিদকে কেন্দ্র করে অনৈক্য এবং বিভেদের সূত্রপাত হয়েছে। তাই উম্মাহর এই চরম অবক্ষয়ের সময়ে পূর্ববর্তীদের বিশুদ্ধ জ্ঞানকে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করার কোনো বিকল্প নেই।
মহান সালাফে-সালেহিনের রচনার স্বাদ এবং ঘ্রাণই আলাদা। অষ্টম শতকের মহান ইমাম ইবনু রজব রহ.-এর রচনায় খুব সরলভাবে উঠে এসেছে তাওহিদের চিত্র। সব শ্রেণির পাঠকদের জন্যই ইনশাআল্লাহ বইটি সুখপাঠ্য হবে। আল্লাহ তাআলা এই মহান ইমামকে গোটা উম্মাহর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
ইমাম ইবনে রজব জন্মগ্রহণ করেন বাগদাদে ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে (৭৩৬ হিজরি)। তার দাদা ছিলেন একজন ধর্মতত্ত্ববিদ, ইসলামী শাস্ত্রের বিশিষ্ট বিদ্বান, বিশেষ করে হাদিস শাস্ত্রের। তার বাবাও বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বহু পণ্ডিতগণে কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তার বয়স যখন পাঁচ, ইবনে রজবের পরিবার দামেস্কে স্থানান্তরিত হয়, তখন তিনি জেরুজালেম সফর করেন এবং সেখানে আল-আলা'ঈর কাছে জ্ঞানার্জন করেন। এরপর তিনি বাগদাদে যান এবং সেখান থেকে মক্কা গমন করেন। মক্কায় তার পিতা তার শিক্ষার জন্য সু-ব্যবস্থা করে রাখেন। এরপর তিনি মিশর সফর করেন এবং এরপর আবার দামেস্কে ফিরে যান, সেখানে তিনি ছাত্রদের শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ইবনে আন-নাকীব (মৃত্যু ৭৬৯ হিজরি), আস সুবকি, আল ইরাকি (৮০৬ হিজরি), মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আল খাব্বাজ এবং প্রমুখ বিদ্বানের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ 'আলিমে দ্বীন ইবনে কায়্যিম আল যাওজিয়্যাহ রহঃ এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার কাছে অধ্যয়ন করেন। ইমাম আন-নববী রহঃ কর্তৃক রচিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "চল্লিশ হাদীছ" এর একটি বৃহৎ ব্যাখ্যা (শরাহ) ইবনে রজব রচনা করেছিলেন (জামি' আল-উলুম ওয়াল হিকাম) যা আজ পর্যন্ত চল্লিশ হাদীছের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। জীবনের শেষ দিকে তিনি শ্রেষ্ঠতম হাদীছ গ্রন্থ ছহীহ আল-বুখারীর ব্যাখ্যা রচনা শুরু করেন কিন্তু "জানাজার সালাত অধ্যায়ে" পৌঁছার আগেই মৃত্যু বরণ করেন। তিনি সেই গ্রন্থের নাম দিয়েছিলেন ফাৎহুল বারী যা পরবর্তীকালে দার ইবনে জাওযী থেকে ৭ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ইবনে রজবের মৃত্যুর ২০ বৎসর পর ইবনে হাজার আস্কলানী রহঃ ছহীহ আল-বুখারীর ব্যাখ্যা রচনা শুরু করেন এবং ইবনে রজব আল হাম্বালি রহঃ এর সম্মানে গ্রন্থের শিরোনাম দেন ফাতহুল বারী যেটা ছহীহ আল বুখারীর শ্রেষ্ঠতম ব্যাখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।