তারানাথ তান্ত্রিক হলেন এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব এবং প্রবক্তা। তাঁর পুরোনাম তারানাথ চক্রবর্তী। উপাধি : "জ্যোতির্বিনোদ"। তাঁর পিতা আদিনাথ।তাঁর জন্মের পূর্বে তাঁর বাড়িতে অমরজীবন নামে এক রহস্যময় ব্যক্তি এসেছিলেন।তিনি ভবিষ্য়বাণী করেছিলেন যে তাদের বংশে এক তান্ত্রিকের জন্ম হবে।সে সময় আকাশে নীল রঙের উল্কা দেখা যাবে।
তিনি মধ্য পঞ্চাশবর্ষী। হাত দেখে আর কোষ্ঠী বানিয়ে দিন গুজরান করেন এই প্রৌঢ়। সংসার তেমন সচ্ছল নয়। অভাব রয়েছে। কিন্তু অভাব কিছুতেই কাবু করতে পারে না মানুষটিকে। স্ত্রী-কন্যা-পুত্র নিয়ে দিব্যি আছেন তারানাথ। জ্যোতিষীর খোলস ছাড়ালে জানা যায়, তিনি একজন সিদ্ধ তান্ত্রিক। কিন্তু কোনও কারণে তার সাধনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। খুব অল্প বয়সে ঘর ছেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে।তিনি সমগ্র বাংলায় পরিভ্রমণের সময় অনেক অতিপ্রাকৃত শক্তির সাথে অনেক মুখোমুখি হন। বীরভূমের এক শ্মশানে মাতু পাগলি নামের এক রহস্যময়ী সাধিকার কাছে মহাডামর সাধনা করেন তারানাথ। কিন্তু তাতে সফল হননি। পরে বরাকরের অরণ্যে তিনি লাভ করেন মধুসুন্দরী দেবীর বর। কিন্তু সেই সাধনাকেও সম্পূর্ণ বলা যায় না। অবশেষে থিতু হন তারানাথ। সংসার নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। একটা সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটিয়ে প্রচুর পয়সা করেছিলেন। কিন্তু তা জলের মতোই বেরিয়ে যায়। কায়ক্লেশে হস্তরেখা বিচার করে আর কোষ্ঠী বানিয়ে দিন যায় তার। তিনি চা এবং সিগারেট সহযোগে তার মট লেন হাউসে কয়েকজন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সেই অভিজ্ঞতাগুলি ভাগ করেছেন। গল্পে বলা হয়েছে লেখক তারনাথের ঘরে নিয়মিত পরিদর্শক। কখনও কখনও তার বন্ধুর সাথে, মাঝে মাঝে একা।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ - ১লা সেপ্টেম্বর,১৯৫০) ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয়বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও কয়েকটি ভ্রমণকাহিনী এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।