কুফরী কাজ করা আর কাফের হয়ে যাওয়া এক জিনিস নয়। অনেক সময় এমন হতে পারে যে,কেউ কুফরী কাজ করেছে,কিন্তু সে এর দরুন কাফের হয়ে যায়নি। কারণ,শরীয়তে এমন কয়েকটি বিষয় আছে,যা বিদ্যমান থাকাবস্থায় কেউ কুফরী কাজ করা সত্ত্বেও কাফের হয় না। এ বিষয়ে শরীয়তের বিশেষ কিছু মূলনীতি রয়েছে। সুতরাং কাউকে কাফের বলতে হলে প্রথমত কোন কোন কাজ কুফরী সেটা জানা থাকতে হবে পাশাপাশি কোন কোন কারণে কুফরী করা সত্ত্বেও ব্যক্তি কাফের হয় না সেটাও জানা থাকতে হবে। এছাড়াও এতে আরো অনেক বিষয় আছে,যা একমাত্র বিজ্ঞ আলেমরাই জানেন।
তাকফীরের ব্যাপারে আমাদের বাংলা ভাষায় প্রামাণ্য ও বিস্তারিতাকারে কোনো বই বা রচনা না থাকায় অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারে না। এমনকি অনেক সাধারণ আলেমদের জন্যও আরবী বই থেকে পূর্ণ ধারণা নেয়া কষ্টকর হওয়ায় তাদেরও এ বিষয়ে তেমন কোনো পড়াশোনা বা অধ্যয়ন নেই। এ সকল বিষয়কে সামনে রেখে আমরা কুরআন-হাদীস ও শরীয়াহর মূলনীতির আলোকে এ বইটি রচনা করতে উদ্যেগী হয়েছি। এতে তেরোটি মূলনীতি উল্লেখ করে প্রত্যেকটি মূলনীতির আলোচনায় আরো অনেক বিষয় সংযোজন করে দিয়েছি। প্রতিটি বিষয়কে কুরআন ও হাদীসের আলোকে প্রামাণ্য করে উপস্থাপন করেছি। এটা অধ্যয়ন করলে আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে তাকফীরের যে প্রচলন আছে তা কিছুটা হলেও কমে আসবে আশা করা যায়। আর তাকফীরের অভ্যাস থেকে মুক্ত হতে পারলে আমাদের পরস্পরে মতভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মুসলিমরা কাছাকাছি হতে পারবো। আমাদের একতা বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি মুসলিম জাহানের উপকার হবে।
আমাদের এ বই রচনার উদ্দেশ্য এ নয় যে, এটা পড়ে আমরা নিজেরাই তাকফীর শুরু করে দিবো। বরং এর উদ্দেশ্য হলো, তাকফীরের ব্যাপারে আমাদের অজ্ঞতাগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া এবং এ ব্যাপারে আমাদের সমাজে যে প্রান্তিকতার খেলা চলছে তার অসারতা অনুধাবন করতে সাহায্য করা,পাশাপাশি এ ব্যাপারে শরীয়তে যে ধমকি আসছে তা প্রসার করে এ থেকে নিবৃত্ত থাকার আহবান জানানো। তাকফীর করা তো বিজ্ঞ আলেমদের কাজ,তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর না কোনো প্রয়োজন আছে আর না কোনো অবকাশ আছে। হ্যাঁ, কারো কুফরী যদি সুস্পষ্ট ও প্রসিদ্ধ হয় কিংবা তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে হক্কানী উলামায়ে কিরামের ঐক্যমত রয়েছে, সেক্ষেত্রে অবশ্য চুপ থাকার অবকাশ নেই। বরং এক্ষেত্রে তাকে কাফের বলাটাই ঈমানের দাবি; যদিও সে নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করুক।
– লেখক