❝স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ❞ বইয়ের ভূমিকা
📚 বাংলাদেশের ইতিহাস লেখার কাজ একাধারে বিপজ্জনক এবং দুরূহ। বাংলাদেশের ইতিহাসের যে বয়ানগুলো হাজির আছে, তার সিংহভাগ উদ্দেশ্যমূলক ও খণ্ডিত। এই খণ্ডিত ইতিহাসে বেশির ভাগ সময় ভীরুরা 'নায়ক' আর বীরেরা 'ভিলেন' বা 'খলনায়ক' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
আমাদেরকে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান যাঁদের সবচেয়ে বেশি সেই তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ্, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন শিরাজীরা আমাদের খণ্ডিত সেই ইতিহাসে হয় অনুপস্থিত, নয়তো উপেক্ষিত। আমাদের ইতিহাসের তথাকথিত সেক্যুলার বয়ান দাঁড়িয়ে আছে 'অসাম্প্রদায়িকতা' আর 'হাজার বছরের বাঙালি' ধারণার ওপর ভিত্তি করে। সেই বয়ানে জমিদারি উচ্ছেদের লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী মুসলিম লীগকে 'সাম্প্রদায়িক বিভেদকামী' রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করে 'বাতিল' করে দেওয়া হয়েছে।
সেই বয়ানে শেখ মুজিবের শাসনকাল ছিল 'স্বর্ণযুগ'। তাহলে আসুন, এবার এই বই-এর হাত ধরে প্রবেশ করি সেই কথিত স্বর্ণযুগে। দেখে নিই, কেমন ছিল সেই দিনগুলো।
মুছে দেওয়া আর ভুলিয়ে দেওয়া সেই ইতিহাসের জগতে আপনাকে স্বাগত জানাই।
গল্পের মতো করে লেখা সেই ইতিহাস আপনাকে কখনো বিস্মিত করবে, কখনো আতঙ্কিত করবে, কখনো-বা কাঁদাবে। আর নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারবেন, এত রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে যেই স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার তওফিক হয়েছিল, আমাদের কোন আদি পাপে সেই রাষ্ট্রটা প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
অতীতের ভুলগুলো জেনে আগামী প্রজন্ম নতুন এক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে- এটাই হোক সবার আকাঙ্ক্ষা।
মুছে দেওয়া আর ভুলিয়ে দেওয়া মুজিব আমলের ইতিহাসের জগতে আপনাকে স্বাগত জানাই। গল্পের মতো করে লেখা এই ইতিহাস আপনাকে কখনো বিস্মিত করবে, কখনো আতঙ্কিত করবে, কখনো-বা কাঁদাবে। আর নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারবেন, এত রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে যেই স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার সামর্থ্য হয়েছিল, আমাদের কোন আদি পাপে সেই রাষ্ট্রটা প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
📚 ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর শেখ মুজিবের শাসনামল স্বাধীন বাংলাদেশের গতিমুখ ঠিক করেছে। এইসময়ের সদ্য স্বাধীন দেশ যেভাবে রাষ্ট্রগঠনের পথে অগ্রসর হয়েছিল সেটাই আজকের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। মুজিব আমলের যেই বয়ান বাংলাদেশের আওয়ামী বলয়ের বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরে গড়ে উঠেছে সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের চলতি বয়ান। সেই বয়ানের উপরে দাঁড়িয়ে। আছে মুজিব শাসনের এক স্বপ্নালু ভাবমূর্তি ও ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে আমরা কোনো সচেতনতা ছাড়াই বহন করি, তার উৎস বা কার্যকারণ না জেনেই। রোলা বার্তে তার মিথোলজিস বইয়ে বলেছেন, আমরা যেই বাস্তবতার মধ্যে বসবাস করি তার জমিনটা তৈরি করে দেয় ইতিহাসের কোন বয়ানের মধ্যে আমরা বাস করি তা। ফলে মুজিব আমলের দুঃশাসন, রাষ্ট্র গঠনের ব্যর্থতা, নজিরবিহীন দুর্বৃত্তায়ন ও ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। ইতিহাসের কোনো একাডেমিক অন্বেষণকে অসম্ভব করে তোলা হয়েছে। গ্রন্থকার ইতিহাসের ধুলো-কালি সরিয়ে সেই চেপে রাখা ইতিহাস নির্মোহভাবে আজকের প্রজন্মের সামনে তুলে ধরেছেন 'স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ' গ্রন্থে।
পিনাকী ভট্টাচার্য
'৯০-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাঠ থেকে উঠে আসা যে কয়জন রাজনৈতিক কর্মী সমসাময়িক বাংলাদেশে আলােচিত লেখক হয়েছেন, পিনাকী ভট্টাচার্য তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সােভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে দিশা খুঁজে ফেরা পিনাকীর রয়েছে বিচিত্র সব রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা। লেখালেখির বিষয় বহুবর্ণ ও বিচিত্র। দর্শন, ইতিহাস আর রাজনীতি পিনাকীর লেখালেখির প্রিয় বিষয়। সফল কর্পোরেট চিফ এক্সিকিউটিভ থেকে এখন লেখালেখি ছাড়াও নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় দেন। একাদেমিয়া নামের একটি নিয়মিত পাঠচক্রের সভাপতি। বাংলাদেশের ফেইসবুকের লেখালেখির জগতে পিনাকী ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। প্রশ্ন তুলতে ভালােবাসেন তিনি। নানা বিষয়ে বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলে অনেক প্রচলিত বয়ানকে নড়বড়ে করে দেয়ার মতাে বিস্ময়কর দক্ষতা আছে পিনাকীর।
Title :
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ - ১ম খন্ড (হার্ডকভার)