‘সূর্য তুমি সাথী’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ এতো অল্প বয়সে এতোটা শৈল্পিক পরিপক্কতা আমার কল্পনারও অতীত। অধ্যাপক আবুল ফজল ‘সূর্য তুমি সাথী’ এই উপন্যাসটিতে সমাজের বাস্তব ছবি আশ্চর্য গতিশীলতায় বাঁধা পড়েছে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (আকাশবাণী) শিল্প-সাহিত্য শুধু যদি আনন্দ প্রকাশের বাহন না হয়ে থাকে এবং শিল্পীর সামাজিক দায়িত্ব বলে কিছু থাকে। তা’হলে আহমদ ছফা একজন যথার্থ শিল্পীর কাজ করেছেন। মাসিক সমকাল সাম্প্রদায়িকতার গোবর গাদা থেকে চেতনার মুক্তি সাধনে এ উপন্যাস একটা বড়ো ভূমিকা পালন করবে। ছফা একটা দুঃসাহসী কাজ করেছেন, এ কথা মানতেই হবে। রণেশ দাশগুপ্ত এই উপন্যাসের ঠাকুরমা চরিত্রটির মতো আদর্শ নারী চরিত্র গোটা বাংলা সাহিত্যে অধিক নেই। সাপ্তাহিক দেশ কী বলিষ্ঠ তোমার লেখনী। তোমার বক্তব্য গতানুগতিক নয় একেবারে নিজস্ব। বইয়ের পাতায় পাতায় বিস্ময়। মনোজ বসু ‘সূর্য তুমি সাথী’ বইটির লেখকের নাম না জেনে যদি পড়তাম, তা’হলে আমি বলতাম তারাশঙ্কর বাবুর লেখা। একজন পাঠকের পত্ৰ কোন কোন বইপত্র লেখা হয়, প্রকাশকালে তাদের যথার্থ মূল্যায়ন হয় না। “সূর্য তুমি সাথী’ও এমন একটি। আশার কথা উপন্যাসটির প্রতি সকলের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দৈনিক বাংলা
চতুর্থ সংস্করণের ভূমিকা মা বাবার পথম সন্তানের মতো ‘সূর্য তুমি সাথী’র উপর আমার একটি পক্ষপাত বরাবর থেকেই যাবে। বইটি প্রথম ষ্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে ১৯৬৭ সালের দিকে ছাপা হয়েছিলো। লিখেছিলাম তারও প্রায় দু বছর আগে। তখন আমার বয়স বড়ো জোর একুশ। এই লেখাটির ভেতর তরুণ বয়সের আবেগ উত্তাপ সবটাই চারিয়ে দিয়েছিলাম। যে গভীর বেদনা এবং অসহ্য আনন্দ আমি এই বইটি লেখার সময়ে অনুভব করেছিলাম, সেই বেদনা, সেই আনন্দের রেশ আমার মর্মকোষে অক্ষয় হয়ে রয়েছে। ‘সূর্য তুমি সাথী’র প্রথম সংস্করণের পরে আরও দুটো সংস্করণ বেরিয়েছে দুটো আলাদা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে। তার মধ্যে একটি কোলকাতা থেকে। অনেকদিন পর চতুর্থ সংস্করণটি আবার স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। ষ্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে বইটি প্রকাশ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মনে হচ্ছে আবার ঘরে ফিরে আসছি। এতে শেষ নয়। আরো কিছু সংবাদ দেয়ার আছে। ষ্টুডেন্ট ওয়েজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাবিবউল্লাহ সাহেব আর বেঁচে নেই। তার বড়ো ছেলে মোহাম্মদ ওহিদউল্লাহ্ যিনি হাত ধরে আমাকে গ্ৰন্থ জগতে নিয়ে এসেছিলেন, তিনিও আজকাল প্রকাশনার সঙ্গে সম্পর্কিত নন। ওই পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান শ্ৰীমান মোহাম্মদ লিয়াকতউল্লাহ এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছে। লিয়াকত শুধু আমার একাধিক বই ছাপছে না- আমার ভ্রাতপুত্র নূরুল আনোয়ারের প্রথম বইটিও প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা যেমন দু’পুরুষ লেখক ষ্টুডেন্ট ওয়েজও দুপুরুষ ধরে প্রকাশক। এটা আমার কাছে খুবই আনন্দের। এ ধরনের ঘটনা তো সচরাচর ঘটেনা। ১৬৬ ময়মনসিংহ রোড ঢকা ১১০০ আহমদ ছফা ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৩
বইটি সম্পর্কে কয়েকটি অভিমতঃ এতো অল্প বয়সে এতোটা শৈল্পিক পরিপক্কতা আমার কল্পনারও অতীত। অধ্যাপক আবুল ফজল ‘সূর্য তুমি সাথী’ এই উপন্যাসটিতে সমাজের বাস্তব ছবি আশ্চর্য গতিশীলতায় বাঁধা পড়েছে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (আকাশবাণী) শিল্প-সাহিত্য শুধু যদি আনন্দ প্রকাশের বাহন না হয়ে থাকে এবং শিল্পীর সামাজিক দায়িত্ব বলে কিছু থেকে থাকে তা’হলে আহমদ ছফা। একজন যথার্থ শিল্পীর কাজ করেছেন। মাসিক সমকাল সাম্প্রদায়িকতার গোবর গাদা থেকে চেতনার মুক্তি সাধনে এ উপন্যাস একটা বড়ো ভূমিকা পালন করবে। ছফা একটা দুঃসাহসী কাজ করেছেন, এ কথা মানতেই হবে। রণেশ দাশগুপ্ত এই উপন্যাসের ঠাকুরমা চরিত্রটির মতো আদর্শ নারী চরিত্র গোটা বাংলা সাহিত্যে অধিক নেই। সাপ্তাহিক দেশ কী বলিষ্ঠ তোমার লেখনী। তোমার বক্তব্য গতানুগতিক নয় একেবারে নিজস্ব। বইয়ের পাতায় পাতায় বিস্ময়। মনোজ বসু ‘সূর্য তুমি সাথী’ বইটির লেখকের নাম না জেনে যদি পড়তাম, তা’হলে আমি বলতাম তারাশঙ্কর বাবুর লেখা। একজন পাঠকের পত্ৰ কোন কোন বইপত্র লেখা হয়, প্রকাশকালে তাদের যথার্থ মূল্যায়ন হয় না। ‘সূর্য তুমি সাখী’ ও এমন একটি। আশার কথা উপন্যাসটির প্রতি সকলের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দৈনিক বাংলা
আহমদ ছফা
আহমদ ছফার জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রাম জেলার চান্দনাইশ থানাধীন গাছবাড়িয়া গ্রামে, এক কৃষিজীবী পরিবারে। বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান। স্কুল ও কলেজের লেখাপড়া যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন, যদিও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। সমাজবিজ্ঞান নিয়ে কিছুদিন পদ্ধতিগত গবেষনা করেন। কিন্তু অচিরেই তা ছেড়ে দিয়ে মৌলিক রচনা ও চিন্তাচর্চায় আত্মনিবেশ করেন। মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য সাংবাদিকতা, পত্রিকা প্রকাশ, প্রেস ব্যবসা বা এনজিও কার্যক্রমকে পেশা হিসেবে নিলেও, আজীবন লেখালেখিই ছিল তার মূল কাজ। ছাত্রাবস্থায়ই লিখেছিলেন সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস, যদিও তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই একটি উপন্যাস সূর্য তুমি সাথী। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, উপন্যাস, অনুবাদ-কর্ম, শিশু-কিশাের সাহিত্য ইত্যাদি মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিরিশের অধিক। তাঁর পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ উপন্যাসটি জাপানি ভাষায় ও ‘বস্তি উজার কবিতাটি জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ ছাড়া ওঙ্কার সহ বেশ কিছু লেখা ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ওঙ্কার উপন্যাসটি চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি বেশ কিছু গানও লিখেছেন। গ্যোতের ফাউস্ট কাব্যনাট্যের বঙ্গানুবাদ তাঁর এক অমর কীর্তি। প্রতিষ্ঠানবিরােধী ও প্রতিবাদী বক্তব্যের জন্য আজীবন তিনি ছিলেন আলােচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে। পাশাপাশি নতুন প্রতিভা আবিষ্কার ও তার লালন এবং নবীনদের মধ্যে চিন্তা উসকে দেওয়ার ব্যাপারেও তাঁর জুড়ি ছিল না। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, যদিও এই সংগঠনের দেওয়া পুরস্কারও তিনি গ্রহণ করেন নি। সমাজের বঞ্চিত শিশুদের জন্য শিল্পী সুলতান পাঠশালা প্রতিষ্ঠা তার অন্যতম কীর্তি। মৃত্যু : ২০০১ সালের ২৮ শে জুলাই, ঢাকায়।