পাশ্চাত্য পণ্য সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রকেরা ইসলামের একাংশকে মৌলবাদ আখ্যা দিয়ে অন্য রক্ষণশীল অংশকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরছে। কিন্তু ইসলামের যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ, প্রগতিশীল সাম্যচেতনার সংস্কৃতি তেমন গুরুত্ব বা প্রচার পায় না। প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি আরব-পারস্য-ইরাক-মিশর-স্পেনে সভ্যতার বিচিত্র বিকাশ ঘটেছিল। তারা গ্রিক দর্শন-সংস্কৃতিকে খ্রিস্টানদের অগ্নিদাহ থেকে রক্ষা করেছিলেন। সমস্ত ধর্মগােষ্ঠীর মতাে ইসলামেও রক্ষণশীলতা এবং প্রগতিশীলতার দ্বন্দ্ব ছিল। ভিন্ন দেশকালে মুক্তবুদ্ধির মানুষদের শিক্ষা-সংস্কৃতি-ভাষা-দর্শন চেতনা, ইসলামি পরিমণ্ডলে সুফি অভিধায় চিহ্নিত হয়ে আছে। ভারতে রাম-সীতা, রাধাকৃষ্ণ প্রভৃতি দেশজ উপাদান নিয়ে বহু সুফি গান লিখেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের লায়লা-মজনু প্রভৃতি প্রেমকাহিনী ইসলামের পূর্বযুগের। যে সুফিরা এ সমস্ত গান লিখেছেন, সাহিত্য রচেছেন, তারা নিজেদের মুসলমান বলেই পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু ভারতের মতাে সংখ্যালঘু মুসলমানের দেশে ধর্মান্ধদের পীড়নে এক শ্রেণির মানুষ শরিয়তের বিধিবিধান অগ্রাহ্য করে ইসলামের লক্ষণ-রেখা পার হয়ে নিজেদের ফকিরদরবেশ বলেছেন। অনেকে আরও এগিয়ে তৃতীয় সমাজভুক্ত বলে আত্মপরিচয় দিয়েছেন। হিন্দু সমাজে ভেক-সন্ন্যাস নিয়ে বহুমানুষ বর্ণাশ্রমের বাইরে চলে যায়। সুফিবাদ নিয়ে গবেষক শক্তিনাথ ঝা’র এটি একটি অসাধারণ গ্রন্থ।
শক্তিনাথ ঝা
শক্তিনাথ ঝা’র জন্ম ১৯৪১ সালে, ভারতের জলপাইগুড়িতে। মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণনাথ কলেজে অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘকাল। বাউল-ফকিরদের নিয়ে, লালনকে নিয়ে, বাউল-ফকিরদের উপর অত্যাচার নিয়ে নানা গ্রন্থ রচনা করেছেন। লােকনাট্য, বিয়ের গান, শ্রমসঙ্গীত, মাদক নিয়েও লিখেছেন। লিখেছেন অন্য এক রাধা। করেছেন বাউল গানের বৃহৎ সংকলন। মুখ্যত, বাউল চর্যার অন্তরঙ্গ স্বরূপ পরিচয় একমাত্র তার রচনায় উদঘাটিত হয়েছে। বঙ্গের সাধক বাউলদের তিনি অন্তরঙ্গজন। বাউল-ফকির সঙ্রে সভাপতি। কথায় ও কর্মে তিনি লােকশিল্পীদের আত্মীয়ও বটে।