আমাদের কথা জাতির দরদী বন্ধু উপমহাদেশের কিংবদন্তীতুল্য ইতিহাস-সচেতন ঔপন্যাসিক নসীম হিজাযী বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে অতি পরিচিত এবং প্রিয় একটি নাম। পাকিস্তানের উর্দু ভাষার এ লেখকের জন্ম ১৯১৪ এবং মৃত্যু মার্চ ১৯৯৬ ঈ.। মুসলিম দুনিয়ায় যে স্বল্পসংখ্যক লেখক ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনায় সার্থক কলম-সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছেন নসীম হিজাযী তাঁদের শীর্ষস্থানীয়। বলা যায়, সাহিত্যের এ মাধ্যমে তাঁর সমকক্ষ তিনি নিজেই। তাঁর লেখায় মুসলমানদের অতীত শৌর্য-বীর্য, জয়-পরাজয়ের ইতিহাসই কেবল প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেনি; বরং পাঠককে করে তোলে ঈমানের বলে বলীয়ান এবং এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টির স্বপ্নে উদ্দীপ্ত। ফলে তাঁর রচনা-সম্ভার অনেক ভাষায়ই অনূদিত হয়ে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে এবং আমাদের বাংলা ভাষায়ও। সাহিত্যকে বলা হয় জীবনের প্রতিচ্ছবি। আর ইতিহাস হচ্ছে কাল ও জাতির দর্পণ। এ দর্পণে দৃশ্যমান বিভিন্ন সময়ের ঘটনা বিশ্লেষণ করে জাতি তার আত্মপরিচয়ের সৌভাগ্য লাভের পাশাপাশি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার পাথেয় যোগাড় করতে পারে। সাহিত্যের একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে উপন্যাস। সাহিত্যের এ বৃহত্তর ক্যানভাসে কাল ও জীবনের ছবি ওঠে আসে অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে। এক্ষেত্রে সামাজিক উপন্যাস যেমন পাঠককে সমাজ-সচেতন করে তোলে, তেমনি ঐতিহাসিক উপন্যাস পাঠককে করে তোলে ইতিহাস-সচেতন। আর ইতিহাস-সচেতন মানুষই কেবল বদলে দিতে পারে অশান্ত ও পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত পৃথিবীর চেহারা। অতীত কাল, ঘটনাপ্রবাহ ও জীবন নিয়ে রচিত হয় বলে ঐতিহাসিক উপন্যাস পাঠকের সামনে ইতিহাসকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে তোলার পাশাপাশি পাঠক-মনে সৃষ্টি করে জীবনদায়িনী প্রেরণা। তাই ইতিহাস-অজ্ঞ আদর্শবিমুখ জাতিকে সুপথে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক উপন্যাসের গুরুত্ব অপরিহার্য। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, নসীম হিজাযীর প্রায় সব উপন্যাসই বিভিন্ন সময় বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। একই উপন্যাস একাধিক ব্যক্তিও অনুবাদ করেছেন। ফলে লাভ হয়েছে, পাঠক সবচে’ মার্জিত ও পরিশীলিত অনুবাদটি বেছে নিতে পারছেন। তাছাড়া বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সর্বত্র সবসময় নসীম হিজাযীর সব বই নাগালের মধ্যে পাওয়া যায় না। জাতির মানস গঠনে এ উপন্যাসগুলোর গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে এবং উপন্যাসগুলো যাতে সবসময় পাঠকের কাছে সহজলভ্য করে রাখা যায় সে লক্ষ্যেই আমরাও এসবের অনুবাদ, প্রকাশ ও বিপণনে অংশীদার হয়েছি। মহান আল্লাহ তায়ালা লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। আমিন! -সমর ইসলাম