সৌন্দর্য আমরা সকলেই অল্পবিস্তর উপলব্ধি করি ও তদ্দরুন বিশেষ আনন্দটি উপভােগ করি। এই উপলব্ধির সহিতই আমাদের বিচারবুদ্ধি ও চিন্তাধারা জাগিয়া ওঠে এবং আমাদের জানিতে ইচ্ছা হয় যে, এই আনন্দের উৎস কোথায় এবং ইহার স্বরূপ কী। এই প্রশ্নটি তখন উত্তর খোজে এবং যতক্ষণ না যুক্তিসংগত উত্তর খুঁজিয়া পায় ততক্ষণ আমাদের হৃদয় এবং বুদ্ধি তৃপ্ত হয় না এবং সৌন্দর্যের উপলব্ধিও অপূর্ণ রহিয়া যায়। কারণ হৃদয় ও বুদ্ধি নিঃসম্পর্ক নহে, বরং তাহাদের একের সহিত অপরের যােগ আছে; এইজন্য দুইয়েরই সংযােগ ভিন্ন পরিপূর্ণ আনন্দ পাওয়া যায় না। ব্যক্তির সমগ্রতা দুইয়েরই মিলনে এবং দুইয়েরই তৃপ্তিসাধন ভিন্ন তাহার চরম পরিতৃপ্তি আসে না। সেইভাবে রসানুভূতিকে সৌন্দর্যদর্শন ঠিক প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য না করিলেও রূপ-বিশ্লেষণকারীর আনন্দোপলব্ধির প্রসারে সহায়তা করে এবং পরােক্ষভাবে রসানুভূতিকেও জাগ্রত করে।
সৌন্দর্য বিচার করা এবং সৌন্দর্য উপলব্ধি করা বা সৃষ্টি করায় পার্থক্য আছে। সুতরাং ইহা মনে করা ভুল হইবে যে, সৌন্দর্যদর্শন পড়িয়া বা আলােচনা করিয়া রূপদক্ষ কি রূপকার হওয়া যায়। নীতিশাস্ত্র পড়িলে যেমন নৈতিক উন্নতি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায় না সেইরূপ ন্যায়শাস্ত্র আলােচনা করিলে তার্কিক হওয়া যাইতে পারে, কিন্তু নির্ভুল নৈয়ায়িক হওয়া যাইবে এমন কথা নাই। এই কথাগুলি সৌন্দর্যদর্শন আলােচনার সময় মনে রাখিতে হইবে। কিন্তু তাই বলিয়া সৌন্দর্য-দর্শন আলােচনার কোনাে বিশেষ সার্থকতা নাই এরূপ মনে করা ভুল হইবে।