আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে নিয়মিত লিখে আসছেন। ইতিহাস, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, নীতিবিদ্যা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ইত্যাদি অবলম্বন করে তিনি চেয়েছেন জীবন ও সমাজের রূপ-স্বরূপের রহস্য উন্মোচন করতে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সংশয়াকুল ও সন্ধিৎসু, মুক্ত ও কল্যাণজিজ্ঞাসু, ইতিহাস ও বিজ্ঞানআশ্রিত, বিশ্লেষণমূলক ও বিচারমূলক এবং ভবিষ্যৎমুখী। তাঁর চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে আবহমান কালের বাঙালি, বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা এবং মানবজাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তাঁর দৃষ্টির দিগন্ত বিশ্বব্যাপী প্রসারিত। তাঁর গুন্থগুলোর মধ্যে আছে: কালের যাত্রার ধ্বনি, মুক্তিসংগ্রাম, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন, সাহিত্যচিন্তা, উনিশ শতকের মধ্যশ্রেণী ও বাঙলা সাহিত্য, বাংলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্য, যুগসংক্রান্তি ও নীতিজিজ্ঞাসা, মানুষ ও তার পরিবেশ, আশা-আকঙ্খার সমর্থনে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা, অবক্ষয় ও উত্তরণ, নবযুগের প্রত্যাশা প্রভৃতি। গত বিছ বছর ধরে বাংলাদেশের নতুন সমাজ ও সংস্কৃতি নির্মাণের লক্ষে তিন সৃজনপ্রয়াসী সাময়িকপত্র লোকায়ত সম্পাদনা করে আসছেন। অনুবাদ করেছেন লিও টলস্টয়, সাঁৎ বভ, বার্টান্ড রাসলে, আলবার্ট আইনস্টাইন, মাও সেতুং, আন্ডুস হাক্সলি প্রমুখের কিছু লেখা। ছাত্রজীবনে তিনি প্রগতিশীল ছাত্র-রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য সংস্কৃতি একটি অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয়। কিন্তু বিষয়টি নানা করণে অবহেলিত থাকছে। বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রশ্নসমূহের সহজ উত্তর এই বইতে পাওয়া যাবে।
আবুল কাসেম ফজলুল হক
আবুল কাসেম ফজলুল হক ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর গোটা পেশাজীবন কাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে গবেষণা ও শিক্ষকতায়। ২০১১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। তখন তাঁর লেখার বিষয়বস্তু ছিল সৌন্দর্য, প্রেম, প্রকৃতি ও জীবনদর্শনের অনুসন্ধিৎসা। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি ১৯৬০-এর দশকে ছাত্র-আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারায় সক্রিয় ছিলেন। সংস্কৃতি সংসদ, সুকান্ত একাডেমি, উন্মেষ, বাংলাদেশ লেখক শিবির, স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ প্রভৃতি সংগঠনে থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তা ও কর্মে সক্রিয় ছিলেন এবং সর্বজনীন কল্যাণ ও প্রগতিশীল নতুন ভবিষ্যতের আশায় ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে লিখে চলছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঢাকা শহরে থেকে পরিচিত ও স্বল্পপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানত অর্থ সংগ্রহ করে দিয়ে ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছেন। আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৬০-এর দশক থেকে নতুন রেনেসাঁস আকাক্সক্ষা করেন। তিনি মনে করেন ভালো কিছু করতে হলে হুজুগ নয়, দরকার গণজাগরণ। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি সকল বিষয়ে তাঁর লেখায় প্রগতির তাড়না কাজ করে।