মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের নেতারা। স্বাধীন দেশের সংবিধান রচনার জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাঁরা বসলেন গণপরিষদে। এ সময় পরিষদের বৈধতা এবং তার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
খসড়া সংবিধানের কিছু বিষয়বস্তু নিয়েও গণপরিষদে গুরুতর আপত্তি ওঠে। দীর্ঘ আলোচনা ও তর্কবিতর্ক হয়। শেষে স্বাধীন দেশের লক্ষ্য, আদর্শ, নাগরিক অধিকার ও সরকারকাঠামো-সংক্রান্ত অধিকাংশ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়। সংবিধানে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় শোষণ ও বৈষম্যহীন একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে। সেই সঙ্গে গণপরিষদে আলোচনাকালে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অস্বীকৃতি, অবাধ জাতীয়করণ, প্রধানমন্ত্রীর হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান, সংসদ সদস্যদের অধিকারহীনতা, নির্বাচনকালীন সরকারসহ কিছু বিষয়ে সতর্কবাণীও উচ্চারিত হয়।
১৯৭২ সালের গণপরিষদ বিতর্কে প্রতিফলিত সেই স্বপ্ন, শঙ্কা আর অঙ্গীকারের কথা না জানলে আমাদের মূল সংবিধান, অভীষ্ট সাংবিধানিক গন্তব্য কিংবা আগামীর সংস্কার-আকাঙ্ক্ষাকে বোঝা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাও উপলব্ধির বাইরে রয়ে যাবে।
সংবিধানের ৫০তম বার্ষিকীতে প্রকাশিত এই বই গণপরিষদের সেই সংবিধানসংক্রান্ত আলোচনা ও বিতর্ক নিয়ে প্রথম কোনো সামগ্রিক বিশ্লেষণ।
ব্যাক কভার
বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানটি রচিত হয়েছিল গণপরিষদের ৮ মাসের প্রচেষ্টায়। সে সময় বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, ড. কামাল হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ চার শতাধিক গণপরিষদ সদস্যের আলোচনা ও বিতর্ক লিপিবদ্ধ হয়েছিল পরিষদের কার্যবিবরণী ও অন্যান্য দলিলপত্রে। এই গ্রন্থে প্রথমবারের মতো এসব দলিল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিশ্লেষণ বলে দেয়, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর আমরা কেমন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম, আমাদের ভুলটা কোথায় হয়েছে,আর কোথায়ই-বা আমাদের সম্ভাবনা।
লেখক পরিচিতি
আসিফ নজরুল
জন্ম ১৯৬৬ সালের ১২ জানুয়ারি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক, লেখক, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক একটি শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের নির্বাচিত ব্যুরো মেম্বার ছিলেন সাত বছর।
এর বাইরে একাডেমিক গবেষক হিসেবেও তাঁর উল্লেখযোগ্য অবস্থান রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন ১৯৯৯ সালে। এরপর জার্মানি ও ইংল্যান্ডে কাজ করেছেন পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে। তাঁর বুক চ্যাপ্টার প্রকাশিত হয়েছে Kluwer, Routledge, Brill/Nijhoff-এর মতো খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা থেকে, বুক রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের এনভায়রনমেন্টাল ল জার্নালে। এ ছাড়া Springer থেকে বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর বুক চ্যাপ্টার এবং ইউপিএল থেকে আন্তর্জাাতিক নদী আইনের ওপর তাঁর গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে অচিরেই। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ (নন-ফিকশন, ফিকশন) ২৬টি। বর্তমান গ্রন্থটি সংবিধানবিষয়ক তাঁর প্রথম বড় ধরনের গবেষণাকর্ম।
আসিফ নজরুল
আসিফ নজরুল জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৯৬৬, ঢাকার লালবাগে। সাংবাদিক হিসেবে একসময় তাঁর বহুল পরিচিতি ছিল। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে উপন্যাস লেখা শুরু করেন। সে সময়ে নিষিদ্ধ কয়েকজন, ক্যাম্পাসের যুবক, আক্রোশসহ তার বিভিন্ন উপন্যাস পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। সম্ভাবনাময় একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি আলােচিতও ছিলেন। ১৯৯৪ সালে পিএইচডি করতে লন্ডনে যাওয়ার পর তার সৃজনশীল লেখালেখি থেমে যায়। ১৯৯৯ সালে দেশে ফেরার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রথম আলাের কলামিস্ট ও টিভি টক-শাের আলােচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। গত কয়েক বছরে কিছু ছােটগল্প লিখলেও দীর্ঘ বিরতির পর উপন্যাস লিখেছেন— অসমাপ্তির গল্প ।