ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ আবহমান বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম মাধ্যম কবিতা। আর কবিতা মাত্রেই স্পন্দিত ঝংকৃত ছন্দিত। ছন্দে দুলিয়ে দেওয়ার ফলেই কবিতার দোলন চলতে থাকে এক কাল থেকে অন্য কালে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে। কবিতার এই সাংগীতিকতা সাহিত্যের আর যত রূপপ্রকল্প আছে- গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সমালোচনা- সমস্ত তেকে কবিতাকে এক পৃথক নিজস্ব মহিমা ও বিভূতি দান করেছে। এই ছন্দ রণন দোলন নর্তন ঝংকারের জন্যেই কবিতা হয়ে ওঠে স্মরণীয় বাণী। কবিতা এভাবেই বক্তব্যের মধ্যে সঞ্চার করে ছন্দের এক অপরূপ ক্রীড়াশীলতা। বচন ঐ রণনের ম্যাজিকেই হয়ে ওঠে অনির্বচনীয়। প্রাত্যহিক বাক্যও ছন্দের জাদুস্পর্শেই হয়ে ওঠে বাণী। ‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’- এ্ররকম একটি বক্তব্যধর্মী পঙক্তি যে কালান্তর পেরিয়ে এসেছে, তা তার বক্তব্যের সঙ্গে ছন্দেরও চিরন্তনতায়।
তাই কবিতার ইতিহাস মানে ছন্দেরও ইতিহাস। কবিতা বুঝতে হলে তাই ছন্দের পাঠও গ্রহণ করতে হয়। চর্যাপদ থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলা কবিতার যে-নানারকম ছন্দ আর তার অজস্র বিভঙ্গ দেখা দিয়েছে, ছন্দের নিবিষ্ট চর্চা ছাড়া তা বোঝা যাবে না।
ছন্দ একই সঙ্গে শিল্প ও বিজ্ঞান। ছন্দের এই বিজ্ঞানসত্তা আর শিল্পসত্তাকে যথার্থ উপলব্ধি করার জন্যেই আধুনিক বাঙালি ছন্রেদ চর্চা শুরু করেছ্ েকিন্তু তা খুব বেশি দিন হয় নি। আবার ছন্দের মতো এরকম ক্রমসৃষ্টিশীল একটি বিষয়ের ক্রমপরিচর্চা প্রয়োজন, নতুন-নতুন আলোপাত দরকার। প্রযুক্ত ছন্দকে বুঝবার জন্যে যেমন, তেমনি ছন্রেদ ভাঙচুরের জন্যেও, নতুন ছন্দের সম্ভাবনার দিগন্ত প্রসারের জন্যেও।
সূচিপত্র প্রথম পর্ব * পরিচয় * শিল্প ও বিজ্ঞান * অক্ষরবৃত্ত * মাত্রাবৃত্ত * স্বরবৃত্ত * গদ্যছন্দ * মিশ্রছন্দ
দ্বিতীয় পর্ব * মাইকেল মধুসূদন দত্ত * রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর * কাজী নজরুল ইসলাম * জীবনানন্দ দাশ * সুধীন্দ্রনাথ দত্ত