মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম তাজউদ্দীন আহমদের ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্তনির্বাচিত বক্তৃতা নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। বক্তৃতাগুলোর মধ্য দিয়ে পাঠক দেশের অনন্যসাধারণ এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রাষ্ট্র ও সমাজভাবনার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। পাঠককে যা এক বিরল অভিজ্ঞতার অংশীদার করবে। এই বইয়ে সংকলিত তাজউদ্দীন আহমদের বক্তৃতাগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের দলিল। সেই সঙ্গে স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপদানের কর্মপরিকল্পনাও। তাজউদ্দীন আহমদ চেয়েছিলেন বাংলাদেশ একটি যথার্থ গণতান্ত্রিক, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন, শোষণমুক্ত, ন্যায় ও সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ এবং ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে উঠুক। স্বপ্নের সেই সমাজ গড়ে তুলতে চাই যুক্তিবাদী, পরমতসহিষ্ণু, উদার, চিন্তাশীল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মী, নেতা তথা মানুষ। রাষ্ট্রের জন্মলগ্নেই সে বিষয়টি নিয়ে ভেবেছিলেন তিনি। বর্তমান বাস্তবতায় তাজউদ্দীন আহমদের চাওয়া সেই মানুষের প্রয়োজন আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। সেদিক থেকে এই বক্তৃতাগুলোর গুরুত্ব অত্যধিক।
তাজউদ্দীন আহমদ
জন্ম ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে। ম্যাট্রিকুলেশন ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বোর্ডে স্ট্যান্ড করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং কারাগার থেকে পরীক্ষা দিয়ে আইন পাস করেন। ছাত্রজীবনেই সমাজকর্মে জড়িয়ে পড়েন। মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নেন। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৮ থেকে ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে এমএলএ হন। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হলে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছয় দফার পক্ষে আন্দোলন পরিচালনাকালে ১৯৬৬ সালে কারাবরণ করেন। মুক্তি পান ১৯৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সময়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনায় পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৯ মাস অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দায়িত্ব পালন করেন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর। ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় বন্দী অবস্থায় তাঁকে হত্যা করা হয়।