ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ এদেশে সবচেয়ে ভালো নজরুলগীতি কিংবা রবীন্দ্রসঙ্গীত কে গান- এ কোনো ভালো প্রশ্ন নয়। তাই এর কোনো সদুত্তর নেই। আলো বলতে অনেক গুলো নামই উঠে আসা সম্ভব। আমাকে কেউ যদি বলেন, দেশের সবচেয়ে ভালো খেয়াল গাইয়ে কে? প্রশ্নটা ঠিক হবে না।তবু উত্তর করার আগে বেঠিক জেনেও আমার মন সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়, রামকানাই। সিলেটের রামকানাই দাশ।
সঙ্গীতের সুক্ষ্ণবোধ তার মতো কারো মধ্যে দেখিনি। খেয়াল শৈলীর এই পরমগুরু বোধকরি একমাত্র উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ওস্তাদ যিনি প্রকৃত রবীন্দ্রসঙ্গীত মনস্ক । তিনি শেখানও তা এবং শেখাতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসান। আমাদের দেশীয় গ্রাম্য গানের বিষয়েও তার রুচি, অভিজ্ঞতা এবং অধিকার অতুলনীয়।
রামকানাইকে সকলেই কেবল খেয়াল গায়ক বলে জানেন মাত্র। তিনি গ্রাম্য গান, তবলা বাদনেরও বড় মাপের শিল্পী। আমাদের দুই বুড়োয় যখন দেখা হয় তখন বেশিরভাগ করা হয় চোখের জলে। রামকানাই কালীনাথ বটে কিন্তু কেবলই কালোয়াত নয়। ভার্চুওসিটি নয়, আর্টের দিকে তার মন। আর মন সুরের দিকে, যা কিনা খেয়াল গায়কদের কোনে স্ট্রং পয়েন্ট নয়, এখানে তো বটেই হয়তো ভারতেও। ওস্তাদ মহলে, বিশেষ করে বিশারদদের মধ্যে একটা কথা চালু আছে, খেয়ালিয়ে বেতালিয়ে হোতে হে। রামকানাই তালের মাথায় চড়েই গান করেন বটে এবং বোঝেন ছন্দ। এই ছন্দবোধের কারণেই তার গান শ্রুতিনন্দন এবং চিত্তসুখকর হয়। এই একজনকে আমি পেলাম যিনি সঙ্গীতকে পেয়েছেন। তার কামরাগুলো নিয়ে মাথা খারাপ করেননি। তার প্রমাণ যেমন তার পল্লীধারার গানের দখল থেকেই পাই, তেমনি পাই তার রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রীতি থেকে। তিনিও আনন্দেও সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখান।
তার সঙ্গে দেখা হয়েছে অজস্রবার। প্রতিবারেই মনে রাখবার মতো কথা হয়েছে কিছু। একবার তিনি নিয়ে গেলেন সিলেট শহরের উপকণ্ঠে এক চা বাগানের কোলের মধ্যে বসানো তার নব নির্মিত বাড়ি। পরিচয় হলো সেখানে তার মেয়ে সুগায়িকা কাবেরী ও তার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার স্বামী সঙ্গে। অবাক হলাম রামকানাইয়ের আর একটি অসাধারণ গুণের পরিচয় পেয়ে। তিনি বাগান করেন নিজ হাতে।