'সবিনয় নিবেদন' বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ পত্ৰাবলী ব্যক্তিমানসের মুকুর । কিন্তু শুধুমাত্র এই মুকুরকেই কাজে লাগিয়ে যে রচিত হতে পারে কোনও স্বয়ংসম্পূর্ণ উপন্যাস, কেন কে জানে, এ-কথা এতকাল ভাবেননি কোনও কথাকার । আলাদাভাবে লেখা চিঠি যে ‘পত্রসাহিত্য' হয়ে উঠেছে, এবং সেই সাহিত্যের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন কোনও-কোনও মনীষী-লেখক, এমন উদাহরণ। অবশ্য রয়েছে। কি স্বদেশে, কি বিদেশে। আবার, উপন্যাসের অন্তর্গত বিশেষ কোনও চরিত্রের বিশেষ কোনও পত্র রেখে গেছে স্থায়ী ছাপ, এমন দৃষ্টান্তও সাহিত্যের ইতিহাসে অলভ্য নয়। কিন্তু শুধুমাত্র পত্র-বিনিময়ের মাধ্যমেই রচনা করা একটি পূণাঙ্গ ও কৌতুহলকর উপন্যাস, এ-ঘটনা সাহিত্যের ইতিহাসে, বোধ করি, অভিনব এক পদক্ষেপ। শুধু সেইদিক থেকেই ঐতিহাসিক গরিমার যোগ্য বুদ্ধদেব গুহর এই পত্রেপন্যাস- সবিনয় নিবেদন' । সুখের কথা, শুধু আঙ্গিকগত নতুনত্বের জন্যই এ-উপন্যাস এক বিশিষ্ট কীর্তিচিহ্ন রূপে বন্দিত হবে না, হবে এর সামগ্রিক আবেদনের জন্য। বুদ্ধদেব গুহর উপন্যাসে দীর্ঘকাল ধরেই চিঠিপত্রের একটি আলাদা স্থান। শুকটু উষ্ণতার জন্য’র ছুটি ও সুকুমারের অথবা ‘মধুকরীর পৃথু ও কুচির চিঠির কথা এ-প্রসঙ্গে অনেকেরই মনে পড়তে পারে। ব্যক্তিজীবনেও চমৎকার চিঠি লেখেন বুদ্ধদেব গুহ । কিন্তু এই নতুন উপন্যাসে পত্ৰবিলাসী কথাকার যেন নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে উঠেছেন । শিক্ষিত, স্বাবলম্বী এবং উদারমনা এক নারী ঋতার সঙ্গে বেতলার জঙ্গলে এক চরম বিপন্ন মুহুর্তে এক-ঝলক দেখা হয়েছিল ঝকঝকে, ব্যক্তিত্ববান, টাইগার প্রোজেক্ট অফিসার রাজর্ষিবসুর। কলকাতায় ফিরে বিপদত্ৰাতা এই মানুষটিকে আন্দাজী ঠিকানায় একটি ধন্যবাদজ্ঞাপক চিঠি পাঠিয়েছিল ঋতা । ‘সবিনয় নিবেদন’ সম্বোধন-বাহিত সেই চিঠিই শেষ পর্যন্ত এই অভাবনীয় উপন্যাসের ভিত্তিপ্রস্তর। পরবর্তী পত্র-বিনিময়ের সূচনা এই চিঠি থেকেই। শুধু দু-জন মানুষের সম্পর্ককে ধীরে-বীরে উন্মোচিত ও সমীপবর্তই করেনি এই পত্রাবলী, দেশ-কাল-সমসময় ও আধুনিকতারও ঘটিয়েছে স্নিগ্ধ, উজ্জ্বল, সরস প্রতিফলন ।
বুদ্ধদেব গুহ
এই সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম বুদ্ধদেব গুহ। পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন নামী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বাের্ড তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বাের্ড-এর সদস্য নিযুক্ত করেছিলেন। আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্রের অডিশান-বাের্ড এর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্ম সেন্সর বাের্ড-এর সদস্যও ছিলেন তিনি। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বাের্ড, পর্যটন বিভাগের উপদেষ্টা বোের্ড এবং নন্দন’ উপদেষ্টা বাের্ড-এরও সদস্য। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের পরিচালন সমিতির সদস্যও নিযুক্ত হয়েছেন। বুদ্ধদেব ছবিও আঁকেন। নিজের একাধিক বই-এর প্রচ্ছদ তিনি নিজেই এঁকেছেন। গায়ক হিসেবেও তিনি বহুজনের প্রিয়। ব্যতিক্রমী লেখক বুদ্ধদেব বাঙালি পাঠক-পাঠিকাদের একাধিক প্রজন্মকে যে ভারতের বন-জঙ্গল, বাদা-নদী, পশু-পাখি এবং অরণ্যে লালিত-পালিত সাধারণ গরিব-গুরবাে মানুষদের ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তা সর্বজনস্বীকৃত। নারী-পুরুষের প্রেম-বিরহ সম্পর্কেও তাঁর কলম অপ্রতিদ্বন্দ্বী । বুদ্ধদেবের সহধর্মিণী সম্রান্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা শ্রীমতী ঋতু গুহ।