বইটি সম্পর্কে সামান্য কিছু কথা যুদ্ধ বলতে কী বুঝায় আমাদেরকে তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। তবে যুদ্ধ ও স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে একটি পাথর্ক্য আছে। আলোচনা না করলে এ পাথর্ক্য কারো কাছে স্পষ্ট হবে না। যুদ্ধ প্রকাশ্য সশস্ত্র সংঘর্ষ হলেও স্নায়ুযুদ্ধ তা নয়। স্নায়ুযুদ্ধ হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্বে প্রভাব বিস্তারে নিজের পরিচয় গোপন রেখে অন্য কারো মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে দুর্বল ও ঘায়েল করার একটি প্রচেষ্টা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এ বিচিত্র যুদ্ধ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছিল। দুটি পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে দুটি পরস্পরবিরোধী সামরিক ও রাজনৈতিক জোটের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ বেধে যোয়। উত্তেজনাপূর্ণ এ পরিস্থিতি আমাদের ভাষায় ঠান্ডা বা শীতল লড়াই। আজকের বাস্তবতা যাই হোক না কেন, ১৯৯০-এর দশকের আগে বিশ্বের প্রতিটি ঘটনায় স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাব ছিল। এমন কোনো ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে দুটি পরাশক্তির একটিও জড়িত ছিল না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাঙ্গা গড়া ও উত্থান পতনে কোনো না কোনো পরাশক্তির স্বার্থ ছিল। তাদের ইঙ্গিতে অথবা পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটনাগুলো ঘটেছে। দুটি পরাশক্তির দ্বন্দ্বে স্থানীয়ভাবে সংকট তৈরি হয়। স্থানীয়দের ভূমিকা সবার নজরে আসতো। পরাশক্তিরা অবস্থান করতো নেপথ্যে। তাদেরকে দৃশ্যপটে খুঁজে পাওয়া যেতো না। বইটি পাঠ করলে অনেকে বিস্মিত হবেন। মনের কোণে অজান্তে এমন বহু দৃশ্য ভেসে উঠবে। বিশ্বে সংঘটিত বহু ঘটনার সঙ্গে আমাদের জাতীয় ও স্থানীয় বহু ঘটনার অদ্ভুত মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। বইটি পাঠ করার পর পরবর্তী জীবনে পাঠকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস। চট করে কোনো কিছু বিশ্বাস করার আগে পাঠকরা দুবার চিন্তা করবেন। পাঠকরা সাক্ষ্য দেবেন যে, আমরা প্রতিনিয়ত যা দেখি তাই একমাত্র দেখা নয়। আমরা যা শুনি তাই শেষ কথা নয়। আজকে আমাদের কাছে যাকে রহস্য বলে মনে হয়, যার কোনো জবাব নেই, আগামীদিনে হয়তো তার মীমাংসা হবে। সত্য তার নিজের শক্তিতে প্রকাশ পায়। বইটিতে আমাদের চিরচেনা পৃথিবীর এমনি কিছু ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে যেগুলো ছিল সমসাময়িককালে রহস্যময়। সত্যি ভূরাজনীতি অতি নির্মম, অতি নিষ্ঠুর। ক্ষমতার প্রভাব বলয় সৃষ্টিতে পরাশক্তির খায়েশে কত উলু খাগড়ার মৃত্যু হয়েছে তার শেষ নেই। একথা আজ কারো অজানা নয় যে, বিশ্বে পরাশক্তির ইচ্ছা ও আশীর্বাদ ছাড়া কোনো ঘটনাই ঘটে না। তাদের ইচ্ছাই ইচ্ছা। তাদের কথাই কথা। তারা যা চায় তাই হয়। তারা তাদের প্রয়োজনে ইচ্ছামতো বিশ্বের মানচিত্র ও রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটায়। উদ্দেশ্য সাধনে প্রথমে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। সবশেষে মঞ্চস্থ হয় চূড়ান্ত পর্ব। এ যেন এক নাটক। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এ নাটকের দর্শক মাত্র। তারা হাসতে বললে আমরা হাসি। কাঁদতে বললে কাঁদি। একটু নড়চড় হলেই বিপদ। গরীবের শত দোষ। কিন্তু হাজারো দোষ করলেও বৃহৎ শক্তির কোনো দোষ নেই। তাদেরকে সালাম করতে হবে, প্রভু বলে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ হচ্ছে আজকের পৃথিবী। এ ছিল স্নায়ুযুদ্ধ । স্নায়ুযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্র শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করলে সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে হাত বাড়ানো যেতো। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ায় একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে এখন সেই সুযোগও নেই। শত্রু হলেও যুক্তরাষ্ট্র, বন্ধু হলেও যুক্তরাষ্ট্র। বাম ও ডান সবাই এখন এক মেরুতে। সাহাদত হোসেন খান ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সূচিপত্র * স্নায়ুযুদ্ধ * সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ইস্টার্ন ব্লক* যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ওয়েস্টার্ন ব্লক * লৌহ যবনিকা * উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা ন্যাটো* সমাজতান্ত্রিক সামরিক জোট ওয়ারশ প্যাক্ট * দুই পরাশক্তির পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা * ১৯৪৮ সালে চেকশ্লোভাকিয়ায় কমিউনিস্ট অভ্যুত্থান * ১৯৪৮ সালে বার্লিন অবরোধ * ১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধ* ১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থানে ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত* গুয়াতেমালায় সিআইয়ের আধাসামরিক অভ্যুত্থান * ভিয়েতনামে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ * ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সংকট * হাঙ্গেরীতে গণঅভ্যুত্থান নস্যাতে সোভিয়েত সামরিক অভিযান * সোভিয়েত আকাশসীমায় মার্কিন গোয়েন্দা বিমান ভূপাতিত * সিআইয়ের চক্রান্তে কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বা নিহত * ১৯৬১ সালের বার্লিন সংকট* ১৯৬২ সালে কিউবায় সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে সংকট * ১৯৬৮ সালে চেকশ্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত সামরিক অভিযান* চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন* ১৯৬৯ সালে চীন-সোভিয়েত সীমান্ত সংঘর্ষ * বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্ব * ১৯৭২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফর * ১৯৭৩ সালের অভ্যুত্থানে চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দে নিহত * ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সামরিক আগ্রাসন* ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সিআইয়ের সম্পর্ক* আফগান মুজাহিদদের কাছে সিআইয়ের অস্ত্র সরবরাহ* ১৯৮৯ সালে দুর্ভেদ্য বার্লিন প্রাচীরের পতন* পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে কমিউনিজম বিরোধী অভ্যুত্থান * ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে সামরিক অভ্যুত্থান* সমাজতান্ত্রিক পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি লেখক পরিচিতি সাহাদত হোসেন খান ১৯৫৬ সালের পহেলা মে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তারপর তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ এবং নরসিংদী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর তার আগ্রহ সহজাত। সেই আগ্রহ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক ও ঐতিহাসিক বিষয়ে নিয়ে বহু বই লিখেছেন। সাংবাদিকতা তাকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। ১৯৮৭ সালে তাঁর সাংবাদিকতায় প্রবেশ। দৈনিক দিনকাল, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক ইত্তেফাকসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব ও বাংলা একাডেমির সদস্য। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে তিনি চার বার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাদত হোসেন খান
লেখক পরিচিতি সাহাদত হোসেন খান ১৯৫৬ সালের পহেলা মে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং নরসিংদী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর তার আগ্রহ সহজাত। সেই আগ্রহ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক ও ঐতিহাসিক বিষয়ে নিয়ে বহু বই লিখেছেন। সাংবাদিকতা তাকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। ১৯৮৭ সালে তাঁর সাংবাদিকতায় প্রবেশ। দৈনিক দিনকাল, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক ইত্তেফাকসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব ও বাংলা একাডেমির সদস্য। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে তিনি চার বার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।