ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ কাজী মোতাহার হোসেনের সুগভীর পাণ্ডিত্য ও বৈদগ্ধ্যের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। এই শান্ত সমাহিত, সৌম্যদর্শন ব্যক্তিটি ছিলেন একদিকে সত্য ও সুন্দরের সাধক, অন্যদিকে সরল, নিরহংকার, আত্নভোলা, সজ্জন ও ঋষিকল্প। মানুষ হিসেবে এবং দ্বিৎসমাজে তিনিছিলেন একং আদর্শস্থানীয় ব্যক্তি। ‘স্মৃতিকথা’ একান্তভাবেই কাজী মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিবরণ। ১৮ টি স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে এই গ্রন্থে। অধিকাংশই তাঁর শেষ জীবনে লেখা। ছোটবেলা ও ছাত্রজীবন নিয়ে লেখা চারচটি প্রবন্ধে (আমার ছোটবেলা, কুষ্টিয়ার স্মৃতিকথা, আমার জীবন-দর্শনের অভ্যূদয় ও ক্রমবিকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ) লেখকের বক্তি মানস ও চরিত্র কীভাবে গড়ে উঠেছিল তার অকপট পরচিয় পাওয়া যায়। দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে মেধা ও বৃত্তির উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে কেমন করে তিনি গড়ে উঠেছেন তারই কাহিনী। লেখাগুলোতে কাজী মোতাহার হোসেনের বহু সহপাঠী ও শিক্ষকের পরিচয় পাওয়া যায়। ব্যক্তিসত্তা ও মূল্যবোধ নির্মাণে তাঁর স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মূল্যবান অবদানের কথা তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন। সাম্প্রদায়িকতাকে তিনি বাল্যকাল থেকেই ঘৃণা করতে শিখেছিলেন। মানবিক মূল্যাবোধে যাদের হৃদয় আলোকিত নয় তাদের তিনি শ্রদ্ধার যোগ্য বলে মনে করেন নি। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখা তিনটি প্রবন্ধ রয়েছে ‘স্মৃতিকথায়’। কাজী মোতাহার হোসেন নিজেই বলেছেন ‘নজরুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার দিনগুলো আমার সাহিত্যিক জীবনে অমূল্য সঞ্চয়। দৃষ্টিতে তীক্ষ্ণতা (বৈজ্ঞানিক হিসাবে) আগে থেকেই ছিল, কিন্তু নজরুলের সংস্পর্শে এসে হয়ত মানুষকে আরও নিকট করে, আপন বলে ভাবতে শিখেছি। এই দুর্লভ মানবীয় অনুভূতি যদি সত্যিই কিছুটা এসে থাকে, তবে তার ষোল আনা না হলেও অন্তত বারা আনাই যে নজরুলের প্রভাবে হয়েছে একথা অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করবো।” (আমার সাহিত্যিক জীবনের অভিজ্ঞতা)। ‘স্মৃতিকথায়’ আরো কয়েকজন মনীষী সম্পর্কে কয়েকটি মূল্যবান লেখা সংকলন করা হয়েছে। এই প্রবন্ধগুলো রবীন্দ্রনাথ , সত্যেন্দ্রনাথ বোসম আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ ও ড, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কে নিয়ে ।কৌতূহলী পাঠকেরা নজরুল-ফজিলতুন্নেসা সম্পর্কের কিছু অজানা অথচ প্রামাণ্য তথ্য জানতে পারবেন এই গ্রন্থের একটি রচনা থেকে।