এক জীবনে আপনি হয়তো অনেক পড়াশোনা করেছেন এবং করবেন। কারণ, জ্ঞানার্জনের জন্য আপনাকে পড়াশোনা করতেই হবে। তবে মুমিন হিসাবে আপনার পাঠ তালিকায় রাসূলুল্লাহর (ﷺ) পবিত্র সিরাত বা জীবন আদর্শ থাকা অপরিহার্য। আদর্শ জীবন বিনির্মাণে 'সীরাতে রহ'মাতুল্লিল আ'লামিন' নামক এই বইটি আপনার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ~ ইনশাআল্লাহ। বইটি পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
বাহ্যিক সৌন্দের্যের জন্য : একজন সভ্য-ভদ্র ও সুন্দর মানুষের জন্য বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সজ্জিত করা অপরিহার্য। অন্য গুণাবলি যতই উচ্চমানের হোক, যদি বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিপাটি না হয়, তবে সে মানুষ কখনোই সভ্যজনদের মধ্যে গণ্য হতে পারে না। আপনি যদি এ ক্ষেত্রে একজন সুন্দরতম মানুষ হিসাবে নিজেকে অলংকৃত করতে চান, তবে জীবন সৌন্দর্যের অনন্য উপমা মহানবীর (ﷺ) জীবনীগ্রন্থ পাঠ করুন। সেখানেই আপনি পাবেন সুন্দরতম অঙ্গসজ্জা ও শ্রেষ্ঠতম বেশবিন্যাস, যার অনুসরণ আপনাকে করে তুলবে সুদর্শন, মার্জিত ও মোহনীয়।
অন্তর্জগৎ আলোকিত করার জন্য : বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের চেয়ে হৃদয় জগৎই বেশি দামি। এটা বহুগুণের লালন ক্ষেত্র, বিপুল সম্ভাবনার বিচিত্র ভুবন। এ ভুবনের চাষাবাদ, যথার্থ পরিচর্যা দ্বারা একজন সাধারণ মানুষ মহামানুষে পরিণত হতে পারে। প্রকৃত মানুষ হিসাবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে অন্তর্লোকে নিহিত গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে হবে। কোথায় পাব সে পথের দিশা? হ্যাঁ, নবী মুহাম্মাদর (ﷺ) জীবনচরিতে রয়েছে তার বিশদ বর্ণনা। সেখানে পাওয়া যাবে উত্তম চরিত্রের বিকশিত রূপ পরিপূর্ণ মাত্রায়। আপনি আখেরি নবী (ﷺ) কে পাঠ করুন। পাবেন সত্যবাদিতা, সাহসিকতা, কোমলতা, দৃঢ়তা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহানুভূতি-সহমর্মিতা, কল্যাণকামিতা, বদান্যতা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, স্নেহ-মমতা, পরমতসহিষ্ণুতা, আত্মসচেতনতা, আল্লাহর প্রতি পরম আস্থা, আপন কাজে নিষ্ঠা ও অবিচলতা, ন্যায়ের প্রতি আনুকূল্য, অন্যায়ের প্রতি বজ্রকাঠিন্য, নিঃস্বার্থ ত্যাগ-তিতিক্ষা। মোটকথা উন্নত চরিত্রের সব উপাদান।
নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নতির জন্য : মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী। সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এ সামাজিক জীবনে আচার-আচরণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মার্জিত আচরণ শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করে, পরকে আপন করে তোলে এবং সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করে। নিঃসন্দেহে সে মার্জিত ব্যবহারের সঠিক ধারণা লাভের জন্য আমাদের অবশ্যই মহানবীর (ﷺ) জীবনীগ্রন্থ পাঠ করতে হবে।
জীবনে ভারসাম্য আনার জন্য : জীবনের সবকিছুতে মধ্যম পন্থাই শ্রেষ্ঠ। কাউকে ভালোবাসবেন, তো সে ভালোবাসার একটা মাত্রা থাকা চাই। আবার সঙ্গত কোনো কারণে কারও সঙ্গে শত্রুতা সৃষ্টি হলে, সে শত্রুতাও যেন সীমা অতিক্রম না করে। অর্থোপার্জন করুন, কিন্তু উন্মত্ত হয়ে নয়, আবার বিত্তে নিরাসক্তিও যেন বৈরাগ্যে পর্যবসিত না হয়। কিন্তু আমরা কী করছি? আমরা যখন আনন্দ করি তখন সম্পূর্ণ বেসামাল হয়ে যাই, আবার যখন অবসাদে পায়, তখন সম্পূর্ণ অকর্মণ্য হয়ে পড়ি। জীবনের সব ভুবনেই আমরা প্রচণ্ড অমিতাচারী। তাই যে সুখের সন্ধানে আমরা ভবঘুরে, কিছুতেই তার নাগাল পাই না। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে জীবনের সব আচার-আচরণে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে। অভ্যস্ত হতে হবে মধ্যমপন্থায় চলতে। আর সে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় মহানবীর (ﷺ) সিরাতে।
দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য : মানুষ হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের ওপর নানাবিধ দায়-দায়িত্ব অর্পিত আছে। পারিবারিক, নৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় প্রভৃতি। এসব দায়-দায়িত্বের প্রতি আমরা খুব কমই সচেতন। যে ব্যক্তি মহানবীর (ﷺ) জীবন-চরিত পাঠ করবে, সে নিঃসন্দেহে এ সত্য মরমে মরমে উপলব্ধি করবে।
রাসূলুল্লাহর (ﷺ) পবিত্র জীবনের পুরোটাই আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। আসুন, রাসূলুল্লাহর (ﷺ) পবিত্র আদর্শে নিজেদের গড়ার লক্ষ্যে আমরা সিরাত পাঠে আত্মনিয়োগ করি। সিরাতের পবিত্র অনিন্দ্য সুন্দর নয়নাভিরাম উদ্যানে আপনাকে স্বাগতম।