‘একটি কথা তোমাকে বলব, তোমার গদ্য লেখার বেশ ভালো ক্ষমতা। এদিকটা যদি আরও অনেকখানি প্রসারিত কর...।’— জসীম উদ্দীন। লিখেছিলেন অনুজ কবি আল মাহমুদকে। জীবনানন্দের পর যাকে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী কবি হিসেবে গণ্য করা হয়।
কবি হিসেবেই আল মাহমুদের যাবতীয় সুখ্যাতি হলেও গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধেও তিনি কম গুরুত্ব বহন করেন না। জ্ঞানের প্রাথমিক শর্ত যে কাণ্ডজ্ঞান, সেটা আল মাহমুদের গদ্য-প্রবন্ধে বেশ ভালোভাবেই উপস্থিত আছে। বাংলা সাহিত্যে আল মাহমুদের মতো ইতিহাসচেতন লেখক কদাচিৎ মেলে। তার নানা প্রবন্ধে ইতিহাসচেতন বিবেচনাবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
সমকালীনরা যখন বয়সের আলস্যে মুখ থুবড়ে পড়েছেন, আল মাহমুদ তখনো রয়েছেন তারুণ্যে উদ্দীপিত। নব্বইয়ের দশকের কবি ও কবিতা নিয়ে লেখা গ্রন্থে সংকলিত তার প্রবন্ধটিই এ কথার প্রমাণ। কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক আল মাহমুদের পর এই সংকলনে আরেক আল মাহমুদকে পেয়ে পাঠক সমান তৃপ্ত হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।
আল মাহমুদ
আল মাহমুদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি ব্যবসায়ী পরিবারে ১১ জুলাই ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। একুশ বছর বয়স পর্যন্ত এ শহরে এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত জগৎপুর গ্রামের সাধনা হাইস্কুলে এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাইস্কলে পড়াশােনা করেন। এ সময়েই লেখালেখি শুরু।
তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার তিরিশ দশকীয় ভাবধারায় ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ দৃশ্যপট, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের কর্মমুখর জীবনচাঞ্চল্য ও নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহের বিষয়কে অবলম্বন করে আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামােয় অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় আঞ্চলিক শব্দের সুন্দর প্রয়ােগে কাব্যরসিকদের মধ্যে নতুন পুলক সৃষ্টি করেন। তিনি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ।
১৯৭৫-এ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে যােগদান করেন। পরে ওই বিভাগের পরিচালকরূপে ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে তিনি অবসর নেন।
কবিতা, ছােটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই মিলিয়ে আল মাহমুদের বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশাের্ধ। আল মাহমুদ বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকসহ বেশ কিছু সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সৈয়দা নাদিরা বেগম তার সহধর্মিণী। তাঁদের পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যা।