ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বাংলা ছোটগল্পের মানচিত্রে অন্নদাশঙ্কর এক নতুন ব্যঞ্জনা, এক স্বতন্ত্র সংজ্ঞা। প্রথম পর্যায়ে তিনি যেন প্রচ্ছন্ন সমাজসংস্কারক। ‘দু’কানকাটা’ থেকে শুরু হল এক ব্যক্তিগত দুঃসাহসিক অভিযান। ‘পরীর গল্প’ এ তিনি ছোটগল্পের প্রথাসিদ্ধ রীতি ও রূপকে আরও বেশি করে , ভেঙে ফেলে মূর্ত করে তুললেন উপলব্ধ জীবন ও স্বপ্নলব্ধ সৌন্দর্যের মধ্যে নিহিত রহস্যময় বৈপরীত্যকে। প্রাতহিক অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে থাকা আধ্যাত্নিকতার স্বরূপ সন্ধান করেছেন ‘‘মীন পিয়াসী’তে। এই রকম ভাবে এক একটি গল্প একটি বিষয়। নিষ্ঠুর পঙ্কিল হিংস্র বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে বাস করেও এক বিচারপতির সৌন্দর্য-সাধনার কাহিনি ‘ও’ যেন লেখকেরেই জীবনকথা। অধিকাংশ গল্পেরই ঘটনাস্থল বাংলার বিভিন্ন মূফঃম্বল শহর, ঘটনাকাল লবণ সত্যাগ্রহ থেকে গান্ধীহত্যা এবং অধিকাংশ চরিত্রই মফঃম্বলের অগ্রসর বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত, তাঁরা চাকুরিজীবী হলেও চাকুরি বর্হিভূত জগৎবিহারী। তাঁদের ব্যক্তিত্বকে বিশিষ্ট করেছে অন্নসংস্থানের মননকর্ম। এখানেই অন্নদাশঙ্করের ছোটগল্পের স্বতন্ত্র মহিমা।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের জন্ম ১৫ মার্চ, ১৯০৪। ১৯২৩-এ আই. এ. ও ১৯২৫-এ বি. এ. ইংরেজি অনার্স পরীক্ষায় প্রথম, আবার ১৯২৭-এ আই. সি. এস প্রতিযােগিতায়ও প্রথম। লন্ডনে শিক্ষানবিশীর পরে ১৯২৯-এর অক্টোবরে কর্মস্থলে যােগদান। পরের বছর ২৩ অক্টোবর বিবাহ, পত্নী অ্যালিস ভার্জিনিয়া অর্ডফের নতুন নাম দেন লীলা রায় । অখণ্ড বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট ও জজ ছিলেন ১৯৪৭ পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গে নানা উচ্চ পদে থাকার পর ১৯৫০-এ চাকুরিতে ত্যাগপত্র দেন, কিন্তু বিচার বিভাগের সচিব পদ থেকে মুক্তি পান ১৯৫১-তে সাতচল্লিশ বছর বয়সে। তখন থেকে সাহিত্য সাধনার জন্য শান্তিনিকেতনে বাস। সাহিত্য অকাদেমির প্রতিষ্ঠাক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর অপর সাধনা হয় দুই বাংলার সেতুবন্ধন। ১৯৬৭-তে পত্মীর দুর্ঘটনা ও কলকাতা বাস শুরু। ৬ অক্টোবর ১৯৯২ পত্নী বিয়ােগ । উপন্যাস ২২, ছােটগল্প ১১, কবিতা-ছড়া ২০, প্রবন্ধ ৫৩, বিবিধ ১২, অন্যান্য ভাষায় গ্রন্থ ১৪ পদ্মভূষণ সাহিত্য অকাদেমির ফেলাে। বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম বর্ধমান ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট আনন্দ পুরস্কার—দুবার। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। আরও বহু পুরস্কার ও পদক। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি।