মানবশিশু এক বিস্ময়কর সত্তা। শিশু বিকাশ এক বহুমাত্রিক প্রতিভাস। তার অভিব্যক্তি এক প্রপঞ্চ ঘটনা- জটিল ও আকর্ষণীয়। বিস্ময়কর কারণ, মানবশিশুর তুল্য, এমনকি তার কাছাকাছি অন্য কোন প্রজাতি খুঁজে পাওয়া যাবে না প্রাণীজগতে। মানবশিশুর বিকাশ বহুমাত্রিক। কারণ, প্রাণের উদ্ভব ও বিবর্তনের যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মানবশিশুর আবির্ভাব, সেখানে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল সে ধারণ করে আছে তার জিনের গঠনে, তিন বিলিয়ন মূল তথ্য যুগলরূপে।শিশু যেখানে ভবিষ্যতের মানুষ, সেখানে তার বর্তমানকে সাজাতে হয় অনাগত ভবিষ্যতের কথা ভেবে। শিশুর জন্য শিক্ষার পরিকল্পনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন তাই গভীর দূরদৃষ্টি দাবি করে। ফলে, বড়দের নিজস্ব অতীত বা বর্তমানকে শিশুর জন্য আদর্শরূপে ধরা যাবে না। শিশুকে তার নিজস্ব জীবন নিয়ে তার অনাগত ভবিষ্যতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার কথা ভেবে তাকে সাহায্য করতে হবে। এখানে প্রয়োজন সংস্কারমুক্ত, নিঃস্বার্থ, নৈর্ব্যক্তিক, উদার ও প্রকৃত অর্তে সৃজনশীল মন- অন্ধ স্নেহ, আদর্শের মোহ ও পুরোনো ধারণার গোড়ামি থেকে মুক্তি এক চেতনা।একটি শিশু একজন বড় মানুষের ক্ষুদ্র সংস্করণ নয়। সে ভিন্ন এক মানুষ, নিজের অনন্য গুণাগুন ও সম্ভাবনা নিয়ে। সম্ভবত সে অন্য এক জগতের অধিবাসী তার নিজস্ব সময়ের ঘটনা প্রবাহ ও পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে। কারণ, সে যখন বড়দের সঙ্গে বাস করছে বর্তমানের ঘটনা প্রবাহের মধ্যে, প্রতিষ্ঠিত জীবন ধারা ও মূল্যবোধের আবহে, সেটা এই সময়ের, যা বড়দের জন্য বর্তমান। কিন্তু শিশু যখন বড়দের সমবয়সী হবে একটি কালিক ব্যবধানে, তখন পৃথিবী বদলে যাবে, হয়তো জীবন ধারাও। নতুন সমস্যা, নতুন চ্যালেঞ্জ ও মূল্যবোধের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানের শিশু তখন অসহায়ত্ব অনুভব করবে, যদি সে এই সময়ের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়ে। বিশ্বাসের চাপে নির্মাণ করা যাবে না, শিশুর আপন বৈশিষ্ট্যকে ভুলে গিয়ে।