অস্তিত্বের জন্য প্রতিটি মানুষের শেকড়ের সন্ধান জানা জরুরি। শেকড়কে জানতে হলে জানতে হবে ইতিহাস। বাংলাদেশের মুসলিম মানসের শেকড় জানতে হলে ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস জানা জরুরি। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভারত উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের ইতিহাস অনেকটা অবহেলিত।
উপমহাদেশে প্রাথমিক মুসলিম শাসনের সূচনা হয় ৯০ হিজরির আগে, বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম রহ.-এর হাত ধরে। তবে তা কেন্দ্রীয় শাসন ছিল না। নানা কারণে দীর্ঘস্থায়ীও হয়নি। ভারতে মুসলিম অভিযানের সূচনা হয় আরও আগে। দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহুর যুগেই ভারত অভিযান শুরু হয়। এই ঘটনা ১৫ হিজরির পরের কথা। এই অভিযান পরিণতি পায় মুহাম্মাদ বিন কাসিমের হাত ধরে। এরপর পর্যায়ক্রমে উত্থান-পতন শেষে বৃটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ বছর মুসলিম শাসকদের হাতে ভারতবর্ষ শাসিত হয়।
ভারতবর্ষে আনুষ্ঠানিক মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় গজনি রাজবংশের হাত ধরে। ৯৭৭ থেকে ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই রাজবংশ স্থায়ী হয়। গজনি বংশ ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ঘোর বংশের হাতে পরাজিত হয়। ঘুরিদের শাসন স্থায়ী হয় ১২১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
বাংলায় আনুষ্ঠানিক মুসলিম শাসনের সূচনা হয় ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজির হাত ধরে, ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে। এই বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে সুলতানি আমলের সূচনা হয়। সুলতানি আমল স্থায়ী হয় ১২০৬-১৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। অপরদিকে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে মামলুকদের হাতে বিজিত হয় দিল্লি অঞ্চল। সূচনা হয় দিল্লি সালতানাতের। দিল্লি সালতানাত স্থায়ী হয় ১২০৬-১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। দিল্লি সালতানাতে এই সময় শাসন করে মামলুক, খিলজি, তুঘলক, সৈয়দ ও লোদি রাজবংশ। ১৫২৬-এ প্রতিষ্ঠিত হয় মুঘল সাম্রাজ্য, সম্রাট বাবরের হাত ধরে। মুঘল সাম্রাজ্য স্থায়ী হয় ১৫২৬-১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
কেন হয়েছিল ক্ষমতার এত পালাবদল? কেমন ছিল মুসলিম রাজবংশগুলোর শাসনব্যবস্থা? কেমন ছিল সেসময়ের রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় ব্যবস্থা? কেমন ছিল শিক্ষাব্যবস্থা? সে যুগের সাথে এ যুগের পার্থক্য কী? মুসলিম শাসন ভারতবর্ষে কতটা ইসলামের ছাপ রাখতে পেরেছে? আর কতটা রাজনীতির ছাপ? এগুলো কি নিছক শাসনব্যবস্থা ছিল না ইসলামি শাসনব্যবস্থা? উপমহাদেশে এবং এই বাংলায় এত মুসলিম ও মসজিদ-মাদরাসা কীভাবে শেকড় গেঁথেছে? কী তার উৎস, কী তার ইতিহাস?
‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ’ বইতে ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসের এই প্রশ্নগুলোর জবাব অনুসন্ধান করা হয়েছে। মোট দুই খণ্ডের বইটির প্রথম খণ্ড ২১টি অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে বিস্তৃত ইতিহাস। ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মুনাজাত থেকে শুরু করে প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা, ইসলাম প্রচারে ওলি-আউলিয়ার অবদান, বঙ্গে ইসলাম প্রচার, মুসলিম শাসনের সূচনা, সিন্ধু বিজয়-সহ রাজবংশগুলোর ইতিহাস বিবৃত হয়েছে সাবলীলভাবে।
প্রথম খণ্ডে আলোচিত হয়েছে গজনি থেকে ইলিয়াস-শাহি বংশ (১৩৪২-১৩৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত। দ্বিতীয় খণ্ড পুরোটাজুড়ে আলোচিত হয়েছে মুঘল শাসনের ইতিহাস। মুঘল শাসকদের জীবনী, তাদের শাসনকাল, অবদান, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। ২০ অধ্যায়ের এই খণ্ডটির শেষ পাঁচটি অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে পর্যায়ক্রমে মুঘল শাসনব্যবস্থায় সমাজ ও সংস্কৃতি, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, শিল্পব্যবস্থা, শিক্ষা-সাহিত্য এবং ভারতবর্ষে সভ্যতা নির্মাণে ইসলামের ঐতিহাসিক অবদান।
নিজের শেকড় ও অস্তিত্ব, মাটি ও মানবের ইতিহাস জানতে পড়ুন ‘চেতনা’ প্রকাশিত ‘সিন্ধু থেকে বঙ্গ।’
মনযূর আহমাদ
Title :
সিন্ধু থেকে বঙ্গ- ১ম ও ২য় খণ্ড একত্রে (হার্ডকভার)