‘শিল্প সংস্কৃতি জীবন’ লেখকের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ (১৯৫৮)। তরুণ বয়সে লেখা, কিন্তু প্রগতিচেতনার নিরিখে বাংলাসাহিত্যের বিশিষ্ট ধারা ও জনাকয় গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকের সৃষ্টি বৈশিষ্ট্যের মূল্যায়ন- নেপথ্যে সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতার প্রেক্ষাপট। বাংলাসাহিত্য সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনীতিতে এর প্রভাব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ, তাই আলোচনা। বিপরীত ধারায় নজরুলের দেশকাল নিয়ে বিচার-ব্যাখ্যা। এর সঙ্গে পঞ্চাশের দশকে পূর্ববঙ্গীয় কবিতা ও কথাসাহিত্যের শীর্ণধারার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে ইতি ও নেতির বিবেচনায়। তৎকালীন আধুনিক প্রবন্ধসাহিত্যের স্বল্পায়তন পরিসরে ‘শিল্প সংস্কৃতি জীবন’ আলোচনার ভিন্নমাত্রার কারণে ছোটখাট ঢেউ তোলে সাহিত্য অঙ্গনে। যদিও একালের বিশালায়তন প্রবন্ধ সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে গ্রন্থটি নগণ্য মনে হওয়ারই কথা। কিন্তু পাঁচ দশক আগেকার সাহিত্য আলোচনার গুরুত্ব বিচারে বইটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ। তুলনামূলক বিচারের টানে পরিশিষ্ট হিসেবে পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশি কবিতার সংক্ষিপ্ত মূল্যায়নধর্মী একটি রচনা সংযোজিত সেখানে পাঠকের কিছু প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে।
আহমদ রফিক
প্রাবন্ধিক, কবি ও কলামিস্ট আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯) ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে পরিচিত, তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার শিক্ষাজীবন বারবার বিপর্যস্ত হয়। শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, মূলত সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং বর্তমানে সম্পূর্ণ সাহিত্যকর্মে সক্রিয়। তিনি রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমীর ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে *শিল্প সংস্কৃতি জীবন* (১৯৫৮), *আরেক কালান্তরে* (১৯৭৭), *ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য* (১৯৯১) এবং *রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প* (১৯৯৬) অন্তর্ভুক্ত। কবিতাগ্রন্থের মধ্যে *নির্বাসিত নায়ক* (১৯৯৬), *বাউল মাটিতে মন* (১৯৭০), *রক্তের নিসর্গে স্বদেশ* (১৯৭৯) উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে একুশে পদক এবং কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি লাভ করেন।