বাংলা কবিতায় আল মাহমুদের শ্রেষ্ঠত্ব আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই। সমালোচকদের চোখে আল মাহমুদ জীবনানন্দ দাশ-পরবর্তী সবচেয়ে শক্তিশালী কবি। প্রায় ৬০ বছরের কবিজীবনে দুহাতে লিখেছেন। তার অধিকাংশ কবিতাই কালোত্তীর্ণ—স্বমহিমায় ভাস্বর।
তার প্রকাশিত প্রায় ২৫টি কবিতা ও ছড়াগ্রন্থ থেকে শ্রেষ্ঠ কবিতা বাছাই করা বেশ দুরূহ কাজ। সাধারণ পাঠকের কাছে তার সব কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা বলে বিবেচিত হতে পারে। কবিতার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ অভিধাটিই বিতর্কিত এবং কবির জন্য বিব্রতকরও বটে। তবুও সবকিছুর মতো কবিতারও মূল্যায়নে আসতে হয়।
কোনো কিছুর মানদণ্ড নির্ধারণে—হোক তা কবিতা বা শিল্পকলা—কে নির্ধারণ করছেন, কিসের মানদণ্ডে নির্ধারণ করছেন—তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসব বিষয় মাথায় রেখেও বর্তমান গ্রন্থে আল মাহমুদের সমগ্রতা ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আল মাহমুদ কেন বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবি—এ জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের আধুনিকতাবাদী কাব্যরুচি থেকে বের হয়ে নতুনভাবে আল মাহমুদকে আবিষ্কার করতে হয়েছে। বর্তমান গ্রন্থটি এ আবিষ্কারেরই স্মারক।
আল মাহমুদ
আল মাহমুদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি ব্যবসায়ী পরিবারে ১১ জুলাই ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। একুশ বছর বয়স পর্যন্ত এ শহরে এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত জগৎপুর গ্রামের সাধনা হাইস্কুলে এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাইস্কলে পড়াশােনা করেন। এ সময়েই লেখালেখি শুরু।
তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার তিরিশ দশকীয় ভাবধারায় ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ দৃশ্যপট, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের কর্মমুখর জীবনচাঞ্চল্য ও নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহের বিষয়কে অবলম্বন করে আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামােয় অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় আঞ্চলিক শব্দের সুন্দর প্রয়ােগে কাব্যরসিকদের মধ্যে নতুন পুলক সৃষ্টি করেন। তিনি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ।
১৯৭৫-এ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে যােগদান করেন। পরে ওই বিভাগের পরিচালকরূপে ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে তিনি অবসর নেন।
কবিতা, ছােটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই মিলিয়ে আল মাহমুদের বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশাের্ধ। আল মাহমুদ বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকসহ বেশ কিছু সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সৈয়দা নাদিরা বেগম তার সহধর্মিণী। তাঁদের পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যা।