“শার্লক হোমস গল্পসংগ্রহ” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপের কথা: বিশ্বসাহিত্য গোয়েন্দা গল্পের প্রথম স্রষ্টা কে বলা কঠিন। পূর্ব এবং পশ্চিমের প্রাচীন সাহিত্যে গোয়েন্দা গল্পের অনেক ইঙ্গিত আছে। তবে আধুনিক গোয়েন্দা কাহিনী বলতে যা বোঝায়। তার জন্ম দেড়শো বছরের কিছু বেশি আগে। অপ্রাকৃত ও উদ্ভট রসের স্ৰষ্টা প্রখ্যাত মার্কিন লেখক এডগার অ্যালান পো-র লেখা “দি মার্ডারস ইন দি রু মৰ্গ’-এ (১৮৪১) প্রথম গোয়েন্দা কাহিনীর স্বতন্ত্র রূপরেখাটি গড়ে ওঠে। পো-র গল্পগুলিতে যে-ভীব্ৰ উত্তেজনাময় ও যুক্তিগত অনুসন্ধান পাঠকের কৌতুহলকে জাগ্ৰত রেখেছে, সেই ধারাতেই ১৮৮৭-তে আবির্ভূত হলেন সখের গোয়েন্দা (অ্যামেচার ডিটেকটিভ) শার্লক হামস। এমন সজাগমন অভিজ্ঞ পারদর্শী গোয়েন্দার জন্য তৃষ্ণাৰ্ত পাঠক যেন এতদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন। দুর্ভেদ্য কিংবা দুঃসাহসিক-যে-কোনও রহস্যের উদঘাটনে শার্লক হামস অদ্বিতীয়। আক্ষরিক অর্থেই সর্বজ্ঞ এই গোয়েন্দাটি তার নানা রহস্যরোমাঞ্চ কাহিনীগুলি নিজে বলেননি। এমনকী লেখকও সরাসরি নন। এগুলির কথক হামসের গুণগ্ৰাহী ডাঃ ওয়াটসন। এই মানুষটির বর্ণাঢ্য ভূমিকা, প্রতিটি গল্পকে কল্পনা ও উপস্থাপনায় আরও সমৃদ্ধ করেছে। শার্লক হামসের কাহিনীগুলির কেন্দ্ৰে আছে নিখুঁতভাবে সংঘটিত একটি অপরাধ। এই অপরাধ ও তার অপরাধীকে আবিষ্কার করার জন্য কয়েকটি মেলা ভার। অপরাধীর সন্ধানে নানা বৈজ্ঞানিক বিদ্যাকে প্রয়োগ করে তাকে প্রায় এক ধরনের যুক্তিগ্রাহ্য বিজ্ঞানের পর্যায়ে উত্তীর্ণ করেছেন এই গোয়েন্দাপ্রবর। অন্যান্য রহস্যসন্ধানীর চেয়ে অনেক অনেক বেশি জনপ্রিয় হামসের প্রতিটি অভিযান আজও পাঠককে সমানভাবে আকৃষ্ট করে। রহস্যগল্পের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগেভাগেই কোনও কিছু না-জানানোই দস্তুর। জানিয়ে দিলে রহস্য ও কৌতুহল-দুই-ইনষ্ট হয়ে যায়। শুধু একটি তথ্য উল্লেখযোগ্য। এই বইয়ে গৃহীত 'চরম সংঘর্ষ’ গল্পে আপাতদৃষ্টিতে হামসের মৃত্যু হয়। কিন্তু পাঠকসমাজ তাদের গোয়েন্দার মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। ফলে হামসকে আবার ডয়েল ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন “খালি বাড়ি’ গল্পে। লন্ডনের বেকার স্ট্রিটের সেই জনপ্রিয় গোয়েন্দার নানা জনপ্রিয়তম কাহিনীগুলি থেকে বাছাই করা একগুচ্ছ গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বই।
স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ১৮৫৯ সালের ২২ মে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা চার্লস অল্টামন্ট ডয়েল, মাতা মেরি। তারা দুজনেই ছিলেন আইরিশ ক্যাথােলিক খ্রিস্টান।
কোনান ডয়েল ১৮৭৬ থেকে ১৮৮১ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গ মেডিকেল স্কুলে পড়াশুনা করেন। একই সঙ্গে এডিনবার্গের রয়েল বােটানিক গার্ডেনেও অধ্যয়নে নিয়ােজিত ছিলেন। অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ছােট গল্প লেখা শুরু করেন। কোনান ডয়েলের প্রথম উপন্যাস ‘এ স্টাডি ইন স্কারলেট’ প্রকাশিত হয় ১৮৮৭ সালে। প্রথমে নাম রাখা হয়েছিল A Traged Skein পরে নাম পরিবর্তন করে ‘এ স্টাডি ইন স্কারলেট রাখা হয়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের প্রথম অর্থাৎ ফার্স্ট নেম রাখার কথা ছিল ‘শেরিফোর্ড’। পরে সে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শার্লক।
কোনান ডয়েল ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। একাধারে তিনি ছিলেন চিকিৎসক, রসায়নবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, ফুটবলার, ক্রিকেটার, গলফার ইত্যাদি। তিনি ১৮৯৯ থেকে ১৯০৯ সালের মধ্যে দশটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন রহস্য উপন্যাসের কালজয়ী লেখক এবং শার্লক হােমস ও ডা. ওয়াটসন চরিত্রের স্রষ্টা। বছরের পর বছর ধরে তার রহস্য গল্প ও উপন্যাসগুলাে পাঠকদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তার গ্রন্থগুলাে ১০০টি দেশে ২৩টি ভাষায় প্রকাশ হয়েছে। তার শার্লক হােমস চরিত্রটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। এ কালজয়ী লেখক ১৯৩০ সালের ৭ জুলাই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান।