উপক্রমণিকা শেখ মুজিব ও স্বাধীনতা’ গন্থখানি শব্দ সৈনিক ইমন সরকার সাহেবের সাহেবের এক অনন্য সৃষ্টি। দেশী বিদেশী গবেষক,সত্য সন্ধানে ব্যাপৃত দার্শনিক,পন্ডিত,সাংবদিক,সাহিত্যিক গণের গবেষণা ও মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে জনাব সরকার শেখ মুজিব ও স্বাধীনতা গ্রন্থ প্রণয়ন করে দেশে, জাতি ও জনগনের সামনে এক প্রামান্য দলিলর উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিব এমন এক উপাখ্যান যা এক থেকে অপরকে বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করা যায় না। আজন্ম স্বাধীনচেতা, প্রতিবাদী শেখ মুজিব ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সত্ত্বাহীনভাবে একে অপরের মধ্যে এমনভাবে বিলিন হয়ে গেছে যে একটা কে বাদা দিয়ে অপরটার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কাজেই স্বাধীনতা ও শেখ মুজিব একক সত্ত্বা। উহাই বাস্তব রুপ লাভ করেছে এক সৈনিক স্বাধীনতা সংগ্রামী জনাব সরকারের বহুমূখী তথ্যাদির স্বার্থক পরিবেশনার মাধ্যম। রাজনৈতিক ঘটনা বহুল জীবনের অধিকারী ,বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বাস্তব রুপকার শেখ মুজিব। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অনেক দার্শনিক দর্শন তত্ত্ব প্রণয়ন করেন অন্যরা উহার পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে বাস্তব রুপ দান করেন। কার্লমার্কস,এঙ্গেলস সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের উপর তাদের মূল্যবান তত্ত্ব দান করেন দাস ক্যাপিটাল ,কম্যুনিস্ট পার্টির ইস্তেহার ইত্যাদি গ্রন্থ প্রণয়নের মাধ্যমে। মহামতি লেলিন উহার বাস্তবায়ন করেন সোভিয়েত রাশিয়ায়।কিন্তু শেখ মুজিবই একমাত্র ব্যক্তিত্ত্ব যিনি বাঙালী জাতীয়তাবাদের স্বপ্ন দ্রষ্ট্রা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে উক্ত জাতীয়তাবাদী চেতনার বাস্তব রুপ দান করেন জীবদ্দশায় ,তাঁরই প্রচেষ্টায়। চলার পথে সঙ্গী সাথী অনেক থাকে ,তাঁদের গুরুত্বও কম নয় স্বাধীনতা অর্জনে । কিন্তু যে ব্যক্তি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অগ্রভাগে সেনানীর ভূমিকায় অবতীর্ন হন তাঁর সমতুল্য কেই হতে পারেন না। জনাব সরকার তাঁর গবেষণায় উহাই উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন। স্বাধীনতা কারও তানের বস্তু নায় উহা অর্জন করতে হয়। স্বর্ণ শৃংখলও মানুষের কাম্য নয় । মানুষ স্বাধীনভাবে জন্ম গ্রহণ করে কিন্তু সর্বত্র সে শৃংখলিত।এই শৃংখল ভেঙ্গে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। ইহা খুব সহজ নয়। এই শৃংখল ভাঙ্গার শুরু হতে শেষ পর্যন্ত দানবের হাতে পৃষ্ট হয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হয় মুক্তিকামী জনতাকে । দয়ার দান হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করা যায় না। যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে ১৯৪৭ সালে ,সেই সংহ্রামের শেষ পর্যায়ে কেউ এসে কিছু পাট করলেই সেটা মূখ্য বস্ত হয়ে যাবে এরুপ চিন্তা করা হাস্যকর সনয় কি? বস্তুত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শেখ মুজিবের নামেই হয়েছে। তিনি মুক্তি যোদ্ধাদের মধ্যে উপস্থিত না থেকেও মুক্তিযোদ্ধার অনুভুতিতে জাগ্রত। তাঁর বজ্র কন্ঠ ‘আর যদি একটা গুলি চলে ……… এবারের সংগ্রাম ,আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সে এক শেকল ছেড়া আহবান। দেহের প্রতিটি শিরায় শিরায় রক্ত নাচানোর বাণ । তাই আহত মুক্তিযোদ্ধা জীবনের শেষ প্রান্তে দাবী করেছে তার রক্ত মাথা সার্ট শেখ মুজিবকে পৌঁছে দিতে। স্বাধীনতার জন্য হাসি মুখে জীবন দানকারী মুক্তিযোদ্ধা তার কমান্ডরকে বলেছেন বঙ্গবন্ধু রক্ত চেয়েছিলেন। আমি রক্ত দিয়েছি রক্ত মাখা এই সার্ট তার জলন্ত প্রতীক। দেশে বিদেশে মুক্তিযোদ্ধ শিবিরে প্রশিক্ষণ শিবিরে একই ধ্বনি ‘তোমার নেতার আমার নেতা শেখ মুজিব ,শেখ মুজিব। তোমার দেশে আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ। ‘ এ শ্লোগান অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নয়মাস ব্যাপি মুক্তিযুদ্ধে। এনাম প্রতিবাদী মুজিব, সংগ্রামী মুজব যুগিয়েছে শক্রর উপর হামলার দুরন্ত সাহস। এ প্রসঙ্গে ভারতের দেরাদুন প্রশিক্ষণ শিবিরের কিছু তথ্যাদি অবগত করছি। ভারতের উত্তর প্র্রদেশের দেরাদুন ক্যাম্পে মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণ চলতো । উক্ত প্রশিক্ষণের সর্বাত্নক দায়িত্ব ছিল জেনারেল সুজন সিং ওবানের উপর। তিনি প্রতিমাসে একবার প্রতিটা ব্যাচের প্রশিক্ষণ পরিদর্শনের আসতেন । আমি মুজিব বাহিনীর চতুর্থ ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম। একদিন তার আনুষ্ঠানিক পরিদর্শনে এসে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি বললেন –I have not seen the tiger, but this is my pleasure that I nurse his babies and these babies will release him from Pakistani Jail. এটা হলো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভারতীয় জেনারেল মূল্যায়ন । তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আকস্মিক কোন ঘটনা ছিল না। ইহা ছিল ১৯৪৭ সালের পর থেকে রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আবির্ভাবের পর রাজনৈতিক বিরর্তনের ফসল। ছয় দফার আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালী জাতীয়তাবাদের অস্তিত্ব পরিপক্ক রুপ লাভ করে। ছয় দফার ।ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে প্রদত্ত ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ম্যান্ডেট পাক সামরিক জান্তা অগ্রাহ্য করলে উহাই পরিণত হয় স্বাধীনতার দাবীতে । আর সকল আন্দোলনের সুযোগ্য নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। জেল ,জুলুম,নির্যাতন ,ষড়যন্ত্র কোন কিছুই বঙ্গবন্ধুকে বাঙালী দাবী থেকে পিছু হটাতে পারেন্ শব্দ সৈনিক জনাব সরকার পুংখানুপুংখরুপে স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবের বলিষ্ট ভূমিকা তুলে ধরেছেন তার গন্থে। জনাব সরকারের এই প্রয়াস স্বার্থক হলে দেশ ,জাতি ও জনতার বিভ্রান্তি অপনোদন পূর্বক মেঘ ভাঙ্গা রোদের মতো সত্য উদ্ভাসিত হবে। সরদার মুশারফ হোসেন (অধ্যাপক সরদার মুশারফ হোসেন) দৌলতপুর,খুলনা।