বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী সন্জীদা খাতুন যখন পাঠকের সামনে শান্তিনিকেতনের স্মৃতি মেলে ধরেন, তখন তা একমাত্রিক স্মৃতি বর্ণনের চেয়ে হয়ে ওঠে বহু বর্ণ-গন্ধ-রূপ-রসমাখা মনোরম আলেখ্য। শান্তিনিকেতন কেবল তাঁর পাঠ গ্রহণের প্রিয়প্রাঙ্গণই ছিল না, ছিল ভবিষ্যৎ সাংস্কৃতিক বিস্তারের সূতিকাগৃহও। এই বইয়ে তিনি সেকালের শান্তিনিকেতনের শিক্ষাক্রম, শিক্ষকমণ্ডলী, বন্ধুদল এবং এই অনন্য অঙ্গনের পরিপার্শ্বকে তাঁর স্মৃতির অক্ষরে গেঁথে তুলেছেন। তাঁর স্মৃতি কেবল ‘সতত মধুর’-এর প্রচলিত ধারণায় ঘুরপাক খায়নি, শান্তিনিকেতনের পুণ্যপথের নানান কাঁটাকেও তিনি স্মৃতি থেকে চয়ন করেছেন। এভাবে শান্তিনিকেতনের দিনগুলি সন্জীদা খাতুনের আত্মস্মৃতির আদলে মূলত বাঙালির সাংস্কৃতিক অতীতের এক বিশিষ্ট অধ্যায় হয়ে উঠেছে।
সন্জীদা খাতুন
সনজীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩-এর ৪ এপ্রিল। তার মা সাজেদা খাতুন। বাবা জাতীয় অধ্যাপক কাজী মােতাহার হােসেন। বাঙালি সংস্কৃতির প্রগতিশীল বিকাশে আত্মনিবেদিত সন্জীদা খাতুন আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে এক অনন্য মানুষ। ভাষা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক স্বাধিকার আন্দোলন, শত বাধার মুখে রবীন্দ্র-শতবর্ষ উদযাপন, বটমূলে বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনকে ঋদ্ধ করে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত্তিস্থাপনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও আমরা তাঁকে দেখেছি অগ্রণী সাংস্কৃতিক নেত্রীর ভূমিকায়। তার ঐকান্তিক সহযােগিতায় গড়ে উঠেছে ‘ছায়ানট ও ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মতাে সংগঠন। এ-ছাড়া ব্রতচারী আন্দোলন আর কাজী মােতাহার হােসেন ফাউণ্ডেশন'-ও তার কর্মকুশলতায় সমুজ্জ্বল। শিশু-শিক্ষার উদ্ভাবনী কর্মতৎপরতায় যুক্ত হয়ে গড়ে। তুলেছেন ‘নালন্দা বিদ্যালয়। সন্জীদা খাতুনের শিক্ষা কামরুননেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে। অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিয়মানুবর্তী, সুশৃঙ্খল, সৃজনী ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বিরল কুশলতায় সমুজ্জ্বল ৮৪ বছর বয়সী সনজীদা খাতুন। এশিয়াটিক সােসাইটির অনারারী ফেলাে সন্জীদা রবীন্দ্রচর্চা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রসারে অবদানের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র-পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা অকাডেমি (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার) প্রদেয় রবীন্দ্র-পুরস্কার, বিশ্বভারতী প্রদত্ত ‘দেশিকোত্তম' ইত্যাদি।